ডিয়েগো ম্যারাডোনা এখন মেক্সিকোতে। সেখানকার দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব দোরাদোস ডি সিনালোয়ার কোচ হিসেবে কাটছে ব্যস্ত সময়। ক্লাবটি নিজেদের বিখ্যাত কোচের জন্মদিনে গত মঙ্গলবার কেক-টেক কেটেছে কি না জানা যায়নি। তবে আর্জেন্টিনার মানুষ তাদের কিংবদন্তি ফুটবলারকে ৫৮তম জন্মদিনে দিয়েছে দারুণ এক উপহার। ম্যারাডোনা যে ক্লাবে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, সেই আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের স্টেডিয়ামের বাইরে গড়া হয়েছে তাঁর ব্রোঞ্জের মূর্তি।

ম্যারাডোনার জন্মদিন ৩০ অক্টোবর, সেদিন বুয়েনস এইরেসে বৃষ্টি ছিল। ভাস্কর হোর্হে মার্তিনেজের গড়া ৯ ফুট উচ্চতার মূর্তিটি তাই উন্মোচন করা হয়েছে গত পরশু।

আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সে ম্যারাডোনার অভিষেক ১৯৭৬ সালে। সেখান থেকেই বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলির হয়ে ক্লাব ফুটবলে আলো ছড়ানো। আর তাঁর ক্যারিয়ারের, জীবনেরও, সবচেয়ে বড় কীর্তিটা এসেছে আর্জেন্টিনোসে অভিষেকের ১০ বছর পর—আর্জেন্টিনাকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ এনে দেওয়া। সেটিও কত নাটকের জন্ম দিয়ে! বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর দুই মেরুর দুই গোল তো ফুটবল উপকথার অংশই হয়ে আছে। প্রথমে হাতের টোকায় বল জালে পাঠানো ‘হ্যান্ড অব গড’ গোল, যেটি নিয়ে ম্যারাডোনা পরে বলেছিলেন, ‘ওটা আসলে ঈশ্বরের হাত ছিল।’ আর বিশ্বকে মুগ্ধ করে দেওয়া ম্যারাডোনার দ্বিতীয় গোলটি প্রথমটির ৪ মিনিট পর। নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে ইংল্যান্ডের পাঁচ খেলোয়াড়কে কাটিয়ে গোলটি স্বীকৃতি পেয়েছে ‘বিংশ শতকের সেরা গোলে’র।

বুয়েনস এইরেসের ব্রোঞ্জের মূর্তিতে দ্বিতীয় গোলটিকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন ভাস্কর মার্তিনেজ, ‘ম্যারাডোনার এই মূর্তি গড়ার পেছনে আমার প্রেরণা ছিল বিখ্যাত ওই গোল। আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের একটি মাইলফলক ছিল সেটি।’ আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের স্টেডিয়ামের বাইরে ক্লাবের লাল জার্সি গায়ে ম্যারাডোনার যে দেয়ালচিত্রটি রয়েছে সেটির পাশেই গড়া হয়েছে ব্রোঞ্জের মূর্তিটি। যেটি নিয়ে বুয়েনস এইরেসের ছোট্ট শহর লা পাতেরনালের প্রধান আলবার্তো বলেছেন, ‘ভাস্কর্য সাধারণত মানুষ মরে যাওয়ার পর গড়া হয়। কিন্তু ডিয়েগো এখনো বেঁচে আছেন। কখনো কখনো আপনি বেঁচে থাকলেও শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে হয়। আর এটা তো সবাই জানে, ম্যারাডোনাকে এখানকার মানুষ সব সময় মনে রাখবে।’

এত ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার দিনে বুয়েনস এইরেসে ছিলেন না ম্যারাডোনা। দোরাদোসের ব্যস্ততার কারণে যেতে পারেননি মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে।