ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম মামলা দায়ের হয়েছে বুধবার রাতে। মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে ফেসবুকে প্রচার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া পাঁচ যুবকের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় এ মামলা দায়ের করে সিআইডি।
এসময় তাদের কাছ থেকে ৫টি মোবাইল, ২টি ল্যাপটপ ও বিকাশের একটি রেজিস্টার খাতা উদ্ধার করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ধারা ২৩(২), ২৪(২) ও ২৬(২)সহ পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন ১৯৮০-এর ৪/১৩ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতার পাঁচজনকে এই মামলায় দুই দিনের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম মোল্যা এ তথ্য জানিয়েছেন।

আসামিরা হলো- পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার কাউসার গাজী, চাঁদপুরের মতলবের সোহেল মিয়া, মাদারীপুরের কালকিনির তারিকুল ইসলাম শোভন, নওগাঁর রুবায়াইত তানভির আদিত্য ও টাঙ্গাইলের কালিহাতীর মাসুদুর রহমান ইমন।

ভুয়া প্রশ্ন ফাঁস চক্রকে গ্রেফতারের বিষয়ে বৃহস্পতিবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মালিবাগে প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম জানান, গত ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে ফেসবুকে প্রচার করে একটি চক্র। টাকার বিনিময়ে সেই প্রশ্নপত্র তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে বলা হয়। টাকা হাতিয়ে নিতেই তারা এই ফাঁদ পাতে। বুধবার সন্ধ্যায় চক্রের যাত্রাবাড়ীর কাজলাপাড়ের মৃধা টেলিকম থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের একটি দল। তাদের কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন ও বিকাশ সিম রেজিস্ট্রেশন করার খাতা জব্দ করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পেয়ে রাত ৯টার দিকে বাড্ডার আলিফ নগর থেকে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় তিনটি মোবাইল ফোন ও দুটি ল্যাপটপ।

বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, প্রশ্ন ফাঁসকারী প্রতারকচক্রের মূলহোতা কাউসার গাজী জানিয়েছে, বর্তমানে তারা প্রশ্ন ফাঁস করতে পারছে না। তাই আগের বছরের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ও সাজেশন বই থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে নিজেদের মতো তৈরি করত। ভুয়া প্রশ্ন তৈরি করে ভাইবার, ইমো, মেসেঞ্জার ও ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে শতভাগ নিশ্চিয়তা দিয়ে প্রচারণা চালায়। এটা দেখে ফেসবুকের ইনবক্সে শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করলে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে এই ভুয়া প্রশ্নপত্র। কাউসার গাজীকে এ কাজে সহযোগিতা করত বন্ধু সোহেল মিয়া। সোহেল অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে প্রশ্ন বিক্রির টাকা লেনদেন করত। দীর্ঘদিন ধরে তারা এভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল।

এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আগে ১০টি ফেক ফেসবুক আইডির মাধ্যমে ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রি করার প্রচারণা চালায় তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র বিক্রি করে তারা ডিজিটাল প্রতারণা করেছে বলে জানান সিআইডির এই পুলিশ সুপার।

এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিআইডির এসআই আবদুল হান্নান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এটিই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রথম মামলা। গ্রেফতার পাঁচজনকে এ মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিলটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। এরপর গত ৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিলটিতে স্বাক্ষর করেন।