প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলে সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও পোষ্যদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বহাল চেয়ে সারাদেশে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’। কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পরিপত্রকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে আগামী মন্ত্রিসভায় কোটা ব্যবস্থাকে পুনর্বহালের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।

গতকাল শনিবার শাহবাগে এক সমাবেশ থেকে এ ঘোষণার পাশাপাশি স্থলপথ, জলপথ ও আকাশপথ অবরোধের আহ্বান জানান সংগঠনটির মুখপাত্র ঢাবির সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন।

এর আগে কোটা বাতিলে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুমোদনের পর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ড ও আরও কয়েকটি সংগঠন বুধবার রাতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। শুক্রবার মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা থাকায় কর্মসূচি শিথিল করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন উপলক্ষে শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত রাখা হয়।

পূর্বঘোষিত সমাবেশ উপলক্ষে শনিবার বেলা ৩টার দিকে আবারও শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ করে সারাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও তাদের পোষ্যদের কয়েকটি সংগঠন। শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ থাকায় আশপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ পাশে বসে থাকলেও যানজট নিরসন কিংবা আন্দোলনকারীদের উঠাতে তাদের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

বেলা তিনটায় সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হলেও বৃষ্টির কারণে বেলা ৪টার পর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বৃষ্টির মধ্যেই মঞ্চের নেতারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বসে থাকে। বৃষ্টি থামার পর রাজধানীর আশপাশ ও দেশের বাইরে থেকে দফায় দফায় মিছিল আসলে সমাবেশ শুরু হয়।

রাজধানীর বাইরে থেকে আসা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতিনিধি ও মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তানরা ৩০ শতাংশ কোটা ফিরিয়ে দিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন ও কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চেয়ে বক্তব্য ও স্লোগান দেন।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন মন্ত্রিসভায় বাতিল না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। সারাদেশেই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ও অবরোধ চলবে। নৌ, সড়ক ও রেলপথেও অবরোধ চলবে। আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় ঘোষিত পরিপত্র বাতিল করতে হবে। আর এটি করা না হলে আমাদের আন্দোলনও চলবে।’

মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আর কেউ ঘরে বসে থাকবেন না। সড়ক, মহাসড়ক, রেলপথ ও নৌ-পথ অবরোধ করুন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরুদ্ধ রাখুন। আমরা দেশ ও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে অতন্দ্র প্রহরী। আন্দোলন চললে সরকার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে।’

সমাবেশ থেকে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠ আরেকবার, জামায়াত-শিবির-রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়, ৩০% কোটা বাতিল মানি না, মানব না, বীর বাঙালি হাতিয়ার, গর্জে উঠ আরেকবার প্রভৃতি স্লোগান দেয়া হয়। এদিকে, অবরোধের কারণে শাহবাগ-প্রেসক্লাব-সাইন্সল্যাব-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রথম দিকে যানজট থাকলেও পরে তারা ভিন্ন রাস্তা দিয়ে ঘুরে চলাচল শুরু করে। রাত আটটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শাহবাগে তাদের অবরোধ চলছিল।-সূত্র -ইত্তেফাক