মুলা খাওয়ার প্রতি মানুষের অনীহা অনেক; কিন্তু শীতের সবজি হিসেবে মুলা আপনার শরীরে উপকার করে। মুলার উপকারিতা জানলে খাওয়ার অনীহা থাকবে না, বরং খেতেই চাইবেন। মুলা হলো ঝাঁজওয়ালা, গোলমরিচের স্বাদের মূল সবজির একটি গ্রুপ। আমরা দেশে লম্বাটে বড় ও ছোট নানা ধরনের মুলা পেয়ে থাকি; তবে মুলা গোলও হয়ে থাকে। এটা আমাদের দেশে হয় না। মুলা লাল ও সাদা রঙের হয়। আমাদের দেশে উভয়ই পাওয়া যায়। মুলা আমরা সাধারণত সবজি হিসেবে রান্না করে থাকি। এ ছাড়া সালাদেও খাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে লাল মুলা বেশি উপকারী। আমরা এখানে লাল মুলার কথা বলছি। লাল মুলা আমাদের দেশি জাত, ঝাঁজ বেশি, খাদ্য উপাদানে উন্নত মানের।

লাল মুলার নানা উপকারিতা
লাল মুলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। খাদ্য উপাদানে ভরপুর, যা আমাদের দেহে এই শীতে অনেক বেশি উপকারী।

লাল মুলা ক্যাটিচিন, পাইরোগালল, ভ্যানিলিক অ্যাসিড এবং অন্য ফেনোলিক যৌগগুলোর মতো অ্যান্টি–অক্সিডেন্টগুলোর একটি ভালো উৎস। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা আপনার কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। লাল মুলায় কার্বোহাইড্রেট খুব কম থাকে, অনেকের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত পছন্দ হতে পারে। কম ক্যালোরি এবং কম গ্লাইসেমিক সূচক থাকায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, থায়ামিন, ভিটামিন বি৬, ফোলেট, পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজের সঙ্গে উচ্চ ফাইবার ও সোডিয়াম আছে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক দেশে মুলা দিয়ে প্রাকৃতিক চিনি উৎপাদন করা হয়।

বৃহদান্ত্রের পরিষ্কারের জন্য: বৃহদান্ত্র থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত পরিষ্কারের বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে যাঁরা পাইলস, অ্যানালফিশার, ফিস্টুলা, কোলাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত, তাঁরা নিয়মিত লাল মুলা খেলে উপকার পাবেন। লাল মুলায় উচ্চ ফাইবার থাকায় অন্ত্র পরিষ্কারের বিশেষ ভূমিকা রাখে; এমনকি অন্ত্রে চেপে থাকা খারাপ ব্যাকটেরিয়া উচ্ছেদ করে দেয়।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়: লাল মুলায় গ্লুকোসিনোলেট ও আইসোথিওসায়ানেটের মতো রাসায়নিক যৌগ থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া মুলা শরীরের প্রাকৃতিক অ্যাডিপোনেক্টিন উৎপাদন বাড়ায়। এই হরমোন ইনসুলিন উৎপাদনে সাহায্য করতে পারে। মুলায় রয়েছে কো–এনজাইম Q10; এটি একটি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা ডায়াবেটিস হতে দেয় না। লাল মুলার গ্লাইসোমিক ইনডেক্স কম, ফলে পেটে পাচনক্রিয়া ধীরে ধীরে হওয়ার জন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

লাল মুলার নানা উপকারিতা
লিভার ঠিক রাখতে: লাল মুলা অন্য যৌগগুলোর সঙ্গে ইনডোল৩, কারবিনল৪, মিথাইলথিও৩ বুটেনাইল আইসোথিওসায়ানেট থাকে, যা লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে এবং ক্ষতির নিরাময় করতে সহায়তা করে। যাঁরা ফ্যাটিলিভারে আক্রান্ত, তাঁরা লাল মুলা খেতে পারেন। এ ছাড়া এসব যৌগ কিডনি থেকে টক্সিন বের করে দিতেও সাহায্য করে।
কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: লাল মুলা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামসমৃদ্ধ। এগুলো উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক নাইট্রেটের একটি ভালো উৎস হওয়ায় রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে। নাইট্রেট শিরাকে প্রসারিত করে রক্ত প্রবাহে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে দেয়।

থাইরয়েড হরমোনে ভারসাম্য আনে: কার্বোহাইড্রেট বা ক্যালোরি ছাড়াই ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ। আপনার আয়োডিনের ঘাটতি থাকলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মুলা খাওয়া আপনার থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে ভারসাম্য আনতে সহায়তা করে। সুতরাং, মুলা ও অন্যান্য ক্রুসিফেরাস সবজি পরিমিতভাবে খাওয়া ভালো।

লাল মুলার নানা উপকারিতা
লাল মুলা খাওয়ার বিভিন্ন উপায় আছে। মিক্সড তরকারি, ভাজি, রান্না, স্যুপ—নানাভাবে খাওয়া যেতে পারে। তবে মুলার কার্যকারিতা পেতে দুপুরে সালাদে খাওয়া সবচেয়ে ভালো। সেই সঙ্গে সাদা ভিনেগার ও মসলা ব্যবহার করে আচার বানানো যেতে পারে।উৎস -প্রথম আলো