ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের মামলায় ঠাকুরগাঁওয়ের সালেকের বদলে টাঙ্গাইলের পাটকল শ্রমিক নিরপরাধ জাহালামের তিন বছর জেল খাটার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ঘটনার জন্য ব্র্যাক ব্যাংককে দায়ী করে এই টাকা এক মাসের মধ্যে দিতে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার বিচারপতি এফ আর নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এই রায় দেন।

সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১২ সালের এপ্রিলে ৩৩টি মামলা করে দুদক। দুদক তদন্ত করে বলে, জালিয়াত চক্র সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখায় আবু সালেকসহ তিনজনের হিসাব থেকে ১০৬টি চেক ইস্যু করে। চেকগুলো ১৮টি ব্যাংকের ১৩টি হিসাবে ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জমা করে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ওই ১৮টি ব্যাংকের মধ্যে একটি হলো ব্র্যাক ব্যাংক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে গ্রেপ্তার করা হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে। তাকে ‘আবু সালেক’ হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা। সে কারণে ব্র্যাক ব্যাংককে এই জরিমানা দিতে বলা হয়েছে।

আদালত বলেছেন, এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের কোনো ভুল না পাওয়ায় তাদের জরিমানা করা হয়নি। তবে দুদককে হাইকোর্ট সতর্ক করে দিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। আর যে ৩৩ মামলায় জাহালমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল, সেগুলোর পুনঃতদন্ত করে দ্রুত সময়ে বিচার শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রায়ের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘জাহালমকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্নে জারি করা রুল কিছু পর্যবেক্ষণ সহকারে নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে ব্র্যাক ব্যাংককে এ ঘটনার জন্য দায়ী করে ৩০ দিনের মধ্যে জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া দুদককে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল ভ্রান্তি যাতে না হয় সে জন্য সতর্ক থাকতে বলেছেন। কারণ এই প্রতিষ্ঠানের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। এছাড়া এই ব্যাংক ঋণের ঘটনায় যে মামলা তার পুনঃতদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলেছেন হাইকোর্ট।’

আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আনিসুল হাসান। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জাকির হোসেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাসার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম।

পাটকল শ্রমিক নিরপরাধ জাহালমকে আসামি করে ঋণ জালিয়াতির মামলায় জড়ানোয় এবং কারাভোগের ঘটনায় তাকে ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না জানতে জারি করা রুলের ওপর গত ১২ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে সেদিন মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়েছিল।

এর আগে ৩৩ মামলায় ‘ভুল’আসামি জেলে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিরাপরাধ জাহালমকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এই প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনার পর আদালত গতবছর ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট টাঙ্গাইলের পাটকল শ্রমিক জাহালমকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন এবং তাকে তাৎক্ষণিক কারামুক্তির নির্দেশ দেন। নির্দেশে সেদিন রাতেই জাহালমকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় জাহালমকে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন যে রুলের ওপর ১২ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষ হয়। উৎস -আমাদের সময়