প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ নিয়ে কানাডায় অবস্থান করা নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) দেশে ফিরতে চান। একই সঙ্গে দেশে ফিরে তিনি জীবনের নিরাপত্তার জন্য থাকতে চান আদালতের হেফাজতে। গতকাল সোমবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে এমন আবেদন দাখিল করা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে- দেশে ফিরে পিকে হালদার ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিনিয়োগকারীদের যে টাকা নিয়ে গেছেন তা উদ্ধার করে তিনি ফেরত দিতে চান। এ জন্য দুদক বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আদালতের কাস্টডিতে থাকতে চান।
শুনানির একপর্যায়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের কৌঁসুলির উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বলেন, পিকে হালদার কবে কখন কোন ফ্লাইটে দেশে ফিরতে চান, সেটি আদালতকে অবহিত করুন। আমরা চাই বিনিয়োগকারীরা যেন তাদের অর্থ ফেরত পান। তবে ওই আবেদনের ওপর প্রয়োজনীয় আদেশ দেওয়ার আগে অ্যাটর্নি জেনারেল
অফিস ও দুদকের বক্তব্য গ্রহণ করা হবে। এদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান ও আইএলএফএসএলের পক্ষে মাহফুজুর রহমান মিলন শুনানি করেন।
এর আগে হাইকোর্ট গত ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে পিকে হালদারসহ আইএলএফএসএলের ১৩ পরিচালকের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ এবং সব সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পিকে হালদারের মা, স্ত্রী, ভাইসহ ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ, সব সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া পিকে হালদারসহ এই ২০ জনের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের গত ৫ বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতেও নির্দেশ দেন আদালত। ওই প্রতিষ্ঠানের সাত আমানতকারীর করা এক আবেদনে এ আদেশ দেন হাইকোর্টের কোম্পানি আদালত। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আইএলএফএসএলের দুই পরিচালক আপিল বিভাগে আবেদন করলেও আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
এ অবস্থায় পিকে হালদার দেশ থেকে কানাডায় পালিয়ে যান। এখন সেখান থেকে তিনি দেশে ফেরার এই আবেদন করলেন। এ বিষয়ে আইএলএফএসএলের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে দাখিল করা আবেদনে বলা হয়, পিকে হালদার কানাডা থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি আইএলএফএসএলকে একটি চিঠি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়, আইএলএফএসএলের খেলাপি ঋণ আদায়ে সহযোগিতা করতে তিনি দেশে ফিরতে চান। তবে দেশে ফিরলে তাকে পুলিশি হেফাজতে না নিয়ে আদালতের হেফাজতে নেওয়া হয়-এমন নিরাপত্তা চান তিনি। ওই চিঠিও আদালতে উপস্থাপন করেন আইএলএফএসএলের আইনজীবী।
বহুল আলোচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফিন্যান্সের এমডি থাকাবস্থায় আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন পিকে হালদার। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে থাকা ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কৌশলে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি ও তার সহযোগীরা। এর মধ্যে আইএলএফএসএল থেকেই ১ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।