অপরাধ সংবাদ | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৩, ২০২০ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1136 বার
মাত্র ৮ লাখ টাকার জন্য দুই ভাইকে ক্রসফায়ার দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের ১৩ ও ১৫ জুলাই ক্রসফায়ারের ঘটনা দুটি ঘটে।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি প্রদীপসহ পুলিশের আরও পাঁচ সদস্য। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা এ ঘটনায় গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমীর আদালতে মামলাটি করেন নিহত ব্যক্তিদের বোন জিনাত সুলতানা।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইফতেখারুল ইসলাম, কনস্টেবল মাজহারুল ইসলাম, দীন ইসলাম ও আমজাদ হোসেন। মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন টেকনাফ ও চন্দনাইশ থানার অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচ থেকে ছয়জন পুলিশ সদস্য। বাদীর আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এ মামলায় আদালত বাদীর অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্তের জন্য আনোয়ারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মামলার আরজিতেদ যা বলা হয়েছে
মামলায় বাদী উল্লেখ করেছেন, গত ১৩ ও ১৫ জুলাই তার প্রবাসী ও পেয়ারাচাষি দুই ভাই আমানুল হক ও আজাদুল হককে চন্দনাইশ থানা-পুলিশের সহায়তায় ধরে নিয়ে যান ওসি প্রদীপ। এরপর তিনি ফোনে তাদের পরিবারের কাছে আট লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় ক্রসফায়ার দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন। তাদের নামে কোনো থানায় একটি মামলা কিংবা সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) ছিল না। যখন ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখনো কোনো অভিযোগ ছিল না।
করোনা সংকটে নিরুপায় হয়ে দেশে ফেরেন বাহরাইনপ্রবাসী ছোট ভাই আজাদ। দেশে ফেরার ২ মাস ১৪ দিনের মাথায় গত ১৩ জুলাই এক বন্ধুর ফোন পেয়ে চন্দনাইশের কাঞ্চননগর ইউনিয়নের নিজ ঘর থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি তিনি। টানা দুই দিনেও আজাদের কোনো খোঁজ না পেয়ে থানায় জিডি করার সিদ্ধান্ত নেন তার পরিবারের সদস্যরা। ছোট ভাই নিখোঁজ হওয়ার ঠিক দুদিন পর ১৫ জুলাই চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের সামনের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে আজাদের বড় ভাই ফারুককে আটক করে নিয়ে যায় চন্দনাইশ থানা-পুলিশ। চন্দনাইশ থানার ওসি কেশব চক্রবর্তীর কক্ষে তাকে নিয়ে রাখায় হয়। এ সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজও আদালতে জমা দেওয়া হয়।
ওই অভিযোগ ওঠার পর সপ্তাহখানেক আগে কেশবকে চন্দনাইশ থানার ওসি থেকে সরিয়ে নেন জেলা পুলিশ সুপার। বর্তমানে তিনি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত। গত ১৬ জুলাই আমানুল হক ও আজাদুল হককে টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে নিহত দাবি করে টেকনাফ থানা-পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তারা দুজন ইয়াবা ব্যবসায়ী। ইয়াবা নিতে চন্দনাইশ থেকে তারা টেকনাফে আসেন।
চন্দনাইশ ও টেকনাফ থানার বরাখাস্তকৃত দুই ওসির পরস্পর যোগসাজশে আমানুল হক ও আজাদুল হককে হত্যা করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান তাদের বোন ও মামলার বাদী জিনাত সুলতানা।
কেশব চক্রবর্তীকে মামলায় কেন আসামি করা হয়নি এ ব্যাপারে সুলতানাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে উঠে আসুক।’
গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। ওই ঘটনায় তার বোনের করা মামলায় ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। এরপর প্রদীপের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের নামে মানুষ হত্যার অভিযোগে একাধিক মামলা হয়।উৎস -আমাদের সময়
Leave a Reply