ব্যাপক অনুসন্ধানের পরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান গত শুক্রবার আনন্দের সাথে ঘোষণা করেন যে তার দেশ তার ইতিহাসের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। কৃষ্ণ সাগরে আবিষ্কৃত এই গ্যাসক্ষেত্রে আনুমানিক ৩২০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস মজুদ রয়েছে। এরদোগান বলেছিলেন যে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ২০২৩ সালে উৎপাদন শুরু হতে পারে।

তুর্কি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে এরদোগান জানিয়েছেন, “তুরস্ক তার ইতিহাসের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কার করেছে। এটি জ্বালানি বাজারে তুরস্ককে শক্তিশালী হয়ে উঠতে সহায়তা করবে। আমরা আমাদের জ্বালানী সমস্যা সমাধানে বদ্ধপরিকর”।

এরদোগান তার জাতিকে বলেন, “এই গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান তুরস্কের অর্থনীতিকে উন্নত ও দেশের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য আল্লাহর দেওয়া উপহার। আমার পালনকর্তা আমাদের জন্য অভূতপূর্ব সম্পদের দ্বার উন্মুক্ত করেছেন”।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গ্যাসের মজুদ তুরস্কের জ্বালানি আমদানি হ্রাস করবে, যা ২০১৯ সালে ৪১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই গ্যাসক্ষেত্র তুরস্কের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যয় কমাতে সহায়তা করবে। তুরস্ক মূলত রাশিয়া, আজারবাইজান এবং ইরান থেকে তার গ্যাস আমদানি করে।

তুরস্কের অর্থমন্ত্রী ও এরদোগানের জামাতা বেরাত আলবায়রাক বলেছেন, তুর্কি সরকার আশা করছে যে এটি দেশের বর্তমান ঘাটতি দূর করবে।

এরদোগান নিজেও এই আবিষ্কারের ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। তুর্কি বিশেষজ্ঞরা আরো বেশি জ্বালানি মজুদ আবিষ্কারের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

তিনি যখন গ্যাস আবিষ্কারের সংবাদটি প্রকাশ করেছিলেন, তখন তিনি জোর দিয়েছিলেন, “আমরা জ্বালানি রফতানিকারক দেশে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত থামব না।”

যদিও তুরস্ক গভীর সমুদ্রে গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলন করতে পারবে না কারণ একাজের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তুরস্কের নেই। তবে এ পর্যন্ত কোন দেশের সাহায্য ছাড়াই ও নিজস্ব সরঞ্জাম ব্যবহার করে গ্যাস অনুসন্ধান করতে সক্ষম হয়েছে। এই আবিষ্কার নিশ্চিত করে যে তুর্কিরা সঠিকভাবে কাজটি করতে সক্ষম।

ঘোষণার সময় এরদোগান বলেছিলেন যে তার দেশ বিদেশি কোম্পানীর পেছনে কোন ধরণের খরচ ছাড়াই গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, এই গ্যাসক্ষেত্র আসলে অনেক বড় উৎসের একটি অংশ। আল্লাহ চাইলে আরো অনেক কিছু পাবো। তুরস্ক বছরের পর বছর ধরে গ্যাসের জন্য অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল ছিল। আমরা এখন আনো নিরাপদ সাথে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি।

উড ম্যাকেনজির পরামর্শক টমাস পার্দি বলেছেন, “এটি তুরস্কের সর্বকালের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ও এটি ২০২০ সালের বৃহত্তম বৈশ্বিক আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটি।”

এই প্রসঙ্গ অনুসরণ করে আমরা বলতে পারি যে তুরস্ক পরাশক্তি হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী তুর্কি সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে এবং তুরস্কে বিপুল সংখ্যক আন্তর্জাতিক পর্যটকের আগমনের মাধ্যমে বিষয়টি খুবই পরিষ্কার।

তুরস্ক প্রযুক্তি ও মহাকাশ শিল্পের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বিশ্বজুড়ে তুর্কি পণ্যের চাহিদা বাড়ায় দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছেছে। এটি এখন জ্বালানি ক্ষেত্রেও নিজস্ব উৎপাদন শুরুর দ্বারপ্রান্তে।

যদিও সমালোচকরা মনে করেন, তুরস্কের গ্যাস বাজারে আসতে সময় নেবে যার কারণে জ্বালানি খাতে দেশটির সয়ং সম্পূর্ণ হতে আরো সময় লাগবে তারপরেও নতুন গ্যাসের মজুদ আঙ্কারাকে আমদানিকারক দেশগুলোর সাথে নতুন চুক্তি করতে সুবিধা দেবে।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গ্রিসের দ্বারা দাবি করা পানিসীমার মধ্যে আঙ্কারার হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা নিয়ে তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করতে পারে।

ইস্তাম্বুলের কাদির হাস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর এনার্জি অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলাপমেন্টের অধ্যাপক জন বাউলাস টিআরটি-কে বলেন, এই আবিষ্কারটি তুরস্কের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু এটি কৃষ্ণ সাগরে আবিষ্কৃত হয়েছে। যদি এটি পূর্ব ভূ-মধ্যসাগরের বিতর্কিত পানিসীমায় হতো তবে তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের সাথে উত্তেজনা শুরু হয়ে যেত।

এই “ঐতিহাসিক” প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধানের পরে, আঙ্কারার দুটি বার্তা রয়েছে। একটি তার মিত্রদের জন্য যে তুরস্ক এখন একটি শক্তিশালী দেশ যার উপর তারা নির্ভর করতে পারে। আর তার শত্রুদের জন্য অন্য একটি বার্তা রয়েছে, তুরস্ক যেকোনো সংকটে একাকি দাঁড়াতে যথেষ্ট শক্তিশালী এবং সহজেই তাকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। মিডল ইস্ট মনিটর, নয়া দিগন্ত