অর্থনীতি | তারিখঃ জুলাই ৮, ২০১৮ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1135 বার
এক সময়ে দেশের জলাশয়ে সুস্বাদু ভেদা মাছ পাওয়া গেলেও এখন তা চোখে পরে না বললেই চলে। বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তের পথে ছোটপ্রজাতির এ মাছটি। চাহিদা বাড়লেও হাতের নাগালে মিলছে না মাছটি।
তবে শিগগিরই এ মাছ হাতের নাগালে মিলবে। বিপন্নপ্রায় ভেদা মাছের বিষয়ে সুখবর দিচ্ছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) প্লাবনভূমি উপকেন্দ্র, সান্তাহার, বগুড়ার মৎস্য বিজ্ঞানীরা। ভেদা মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছেন তারা। এখন থেকে সুস্বাদু ছোট প্রজাতির এ মাছ পুকুরে চাষ করা যাবে।
বিলুপ্তের পথে যাওয়া দেশীয় ভেদা মাছের নতুন এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের নেতৃত্বে ছিলেন বিএফআরআই’র প্লাবনভূমি উপকেন্দ্র, সান্তাহার, বগুড়া’র দায়িত্বে থাকা ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ডেভিড রিন্টু দাস।
এ কর্মকর্তা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, এ উপকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সাথে করে গত তিন বছর ধরে প্রযুক্তিটি নিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্টেশনের নিয়মিত কাজের বাইরে নিজ উদ্যোগেই এ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করি। এতে সফলতাও মিলেছে।
ড. ডেভিড রিন্টু দাস জানান, এ মাছের চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কোন প্রযুক্তি না থাকার কারণে পুকুরে চাষ করা সম্ভব হচ্ছিল না। নতুন প্রযুক্তিটি উদ্ভাবনের ফলে এখন পুষ্টিসমৃদ্ধ ভেদা মাছ যে কেউ চাষ করতে পারবেন।
ভেদা একটি মাংসাশী মাছ, খেতে খুব সুস্বাদু উল্লেখ করে গবেষকেরা জানান, বিভিন্নভাবে মানবসৃষ্ট এবং প্রাকৃতিক কারনে ভেদা মাছ দেশের জলাশয় হতে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রর বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সম্ভব হয়েছে কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন। স্টেশন এলাকার আদমদিঘীর চাষীরা এই মাছ পুকুরে চাষে সফলতা পেয়েছেন।
ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ডেভিড রিন্টু দাস এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, স্টেশনের ভেতরে পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়েছে। এতে সফলতাও পাওয়া গেছে। গত বছরে উন্মুক্ত জলাশয়ে এ মাছের পোনা দেয়া হয়েছিলো। স্থানীয় পুকুরেও চাষ করা হয়। সবকিছুইতে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।
চলতি প্রজনন মৌসুমে পুকুরে চাষের জন্যে দুই লাখের বেশি পোনা উৎপাদন করে চাষীদের মাঝে বিতরন করা হয়েছে।
ভেদা মাছ সম্পর্কে এ কর্মকর্তা জানান, ছয়মাস পুকুরে চাষের পর একেকটি ভেদা মাছ প্রায় ৪০০ গ্রাম ওজনের হবে। বাজারে চাহিদা থাকায় এ মাছ চাষে অনেক ভালো লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বাজারে এ মাছ কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়।
ভেদা ছোট প্রজাতির মাছ হওয়ায় দেশের অন্যান্য ছোট মাছে যেসব পুষ্টিগুণ রয়েছে তার প্রায় সব পুষ্টিই এতে রয়েছে। এছাড়া বড় মাছ যেমন ষোল, চিতল, বোয়ালসহ একাধিক বড় মাছে যেসব পুষ্টিগুণ রয়েছে ভেদা মাছেও একই পুষ্টি রয়েছে।
ভেদা মাছের সবচেয়ে বড় গুণ হলো এতে কোনো চর্বি নেই। ফলে বর্তমানের প্রেক্ষিতে এ মাছের চাহিদা অনেক বেশি। চাষিরা এ প্রযুক্তি গ্রহণ করলে আরও ব্যাপকভাবে এ মাছের পোনা উৎপাদন করে সরবরাহ করা সম্ভব বলেও জানান এ মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
অন্যান্য মাছের মতো চাষ পদ্ধিতি হলেও কিছুটা আলাদা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, যেমন এ মাছ জীবন্ত খাবার খেয়ে থাকে। কেউ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে তা জানিয়ে দেয়া যাবে।
সম্প্রতি এ প্রযুক্তিটি দেখতে যান বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ ) ও স্বাদু পানি কেন্দ্র ময়মনসিংহ মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. খলিলুর রহমান। তিনি জানান, প্রযুক্তিটি খুবই যুগপোযোগী। অনেক ভালো সম্ভাবনাও রয়েছে এ মাছ চাষে।তথ্যসূত্র-এগ্রিকেয়ার২৪ডট কম
Leave a Reply