পঞ্চগড়ে প্রেমিকের সহযোগিতায় স্বামীকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে। মৃত্যুর আগে ঘাতকদের নাম বলে গেছেন নিহত জহুর আলী (৬৫)। বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) ভোরে তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্তরা হলেন- জহুর আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদা বেগম (৪৫) এবং তার প্রেমিক ইদ্রিস আলী (৫০)। নিহত জহুর আলীর বাড়ি জেলার আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের গাঠিয়াপাড়া এলাকায়।

পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিন বছর ধরে জহুর আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদা বেগমের সঙ্গে আটোয়ারী উপজেলার সাতখামার এলাকার ইদ্রিস আলীর পরকীয়া সম্পর্ক চলছিল। করোনা পরিস্থিতিতে বেকার হয়ে পড়েন জহুর আলী। বুধবার (১ জুলাই) ইদ্রিস কৌশলে জাহেদা ও জহুর আলীকে বাংলাবান্ধা এলাকায় পাথর ভাঙার কাজ দেয়ার কথা বলে বাংলাবান্ধায় নিয়ে যান। সেখানে হকিকুল ইসলামের একটি ঘর ভাড়া নেন তারা। সেখানে অন্য শ্রমিকরাও ভাড়ায় থাকতেন।

বৃহস্পতিবার ভোরে জহুর আলী তার স্ত্রী ও ইদ্রিসকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। এ সময় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জহুর আলীর গলায় ছুরি চালিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান ইদ্রিস ও জাহেদা। জহুর আলীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে গলায় ছুরিকাঘাত অবস্থায় দেখতে পান। তখনও কথা বলছিলেন জহুর। এ সময় স্থানীয় এক ব্যক্তি ভিডিও ধারণ করেন। ওই ভিডিওতে ইদ্রিস ও তার স্ত্রী জাহেদা খাতুন তার গলায় ছুরি চালিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেছে বলে তিনি জানান।

পরে স্থানীয়রা তাকে প্রথমে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করেছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

জহুর আলীর ছেলে নুরুজ্জামান বলেন, আমার মা মারা যাওয়ার পর জাহেদা বেগমকে বিয়ে করেন আমার বাবা। ইদ্রিসের সঙ্গে আমার ছোট মায়ের তিন বছর ধরে সম্পর্ক। এর আগে একাধিকবার বিচার শালিসও হয়েছে। কাজ দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে আমার ছোট মা ও ইদ্রিস পরিকল্পিতভাবে আমার বাবাকে গলা কেটে হত্যা করেছে। আমি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলন বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে ইদ্রিসকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় জহুর আলীর গলায় ছুরি চালিয়ে পালিয়ে যায় তারা। পরে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন গিয়ে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। মৃত্যুর আগে ইদ্রিস ও তার স্ত্রী যে তার গলায় ছুরি মেরেছে এটা তিনি স্পষ্টভাবেই বলতে পেরেছেন। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।

তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, পরকীয়ার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। আমরা ঘটনাস্থল থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করেছি। হত্যায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।