কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষা নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল জোবেদা খাতুন সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার (জেকেজি হেলথ কেয়ার) কর্তাব্যক্তিরা। করোনা ভাইরাস পরীক্ষাায় নানা ভোগান্তি থাকায় এ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রচার চালাত এবং ফাঁদে পা দিলে ভুক্তভোগীদের বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। জেকেজি বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের কাজটি করবেÑ সরকারের কাছ থেকে এ শর্তে অনুমতি নিলেও নিয়ম ভেঙে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইট খুলে টাকা নিয়ে রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের পর তা ফেলে দিয়ে ভুয়া সনদ সরবরাহ করে আসছিল। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক গ্রাফিকস ডিজাইনার গ্রেপ্তার হুমায়ুন কবীর হিরুর হাতে তৈরি হতো এ ভুয়া সনদ।

গত সোমবার রাতে হুমায়ুন ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারির জব্দ করা কম্পিউটার-ল্যাপটপ এবং পুলিশহেফাজতে থাকাকালে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রটির ভুয়া সনদপ্রাপ্ত অনেক করোনা পজিটিভ রোগী ইতোমধ্যে অন্যদের মাঝে সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অভিযোগ তদন্তকারী এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাড়ির কেয়ারটেকার কামাল হোসেন। ওই বাড়ির মালিক ও তার স্ত্রীর জ্বর, সর্দি হওয়ায় কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য অনলাইনে জেকেজির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নমুনা সংগ্রহকারী বেসরকারি এ প্রতিষ্ঠানের হয়ে কথা বলেন হুমায়ুন। এ দুজন ছাড়াও তাদের ছেলে, গাড়িচালক, গৃহকর্মীর নমুনা তিন দফায় বিজয়

সরণি মোড়ে কলমিলতা মার্কেটের কাছ থেকে হুমায়ুনের লোক এসে নিয়ে যায়। এজন্য ৪৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পরে তাদের ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া হয়। কামাল হোসেনই শুধু নন, আরও একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে জেকেজির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে কামাল হোসেনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হুমায়ুন কবীর হিমু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন অর্থাৎ গত মঙ্গলবার জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। হুমায়ুনের নিজস্ব কম্পিউটারে মেলে করোনা পরীক্ষার বেশ কিছু ভুয়া সনদের নমুনা। এর পর তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া কোভিড-১৯ সনদ সরবরাহের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে বড় ধরনের তথ্য মেলে। তিনি আরও জানান, হুমায়ুন ও তানজিনা জেকেজিতে চাকরি করতেন। তানজিনা একটি বেসরকারি ক্লিনিকের নার্স ছিলেন। মহামারী করোনা শুরুর পর ক্লিনিকটি বন্ধ হয়ে গেলে স্বামীর সূত্র ধরে জেকেজি হেলথ কেয়ারে যোগ দেন। জেকেজির আইটি বিভাগে বসে ভুয়া সনদ তৈরির বিষয়টি রপ্ত করার পর স্বামী-স্ত্রী চাকরি ছেড়ে দিয়ে অনলাইনে প্রচারণা চালিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা শুরু করেন। ২২ জুন রাতে হুমায়ুন ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের পর তাদের কম্পিউটারে ৪৩টি সনদ পাওয়া যায়। এর মধ্যে চার প্রবাসীও রয়েছেন।

জানা গেছে, নমুনা পরীক্ষার ফল প্রকাশেও তারা ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। সাধারণত সরকারিভাবে যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়, সেগুলোর ফল জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের (এমআইএস) মাধ্যমে। সেখান থেকেই এসএমএসের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষার ফল যায় প্রত্যেকের মোবাইল ফোনে। সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানেও একই ফল চলে যায়; কিন্তু জেকেজির কালেক্ট করা অনেক নমুনা এমআইএস বিভাগে যেত না। ফলে জেকেজির পক্ষ থেকে সংগ্রহ করা নমুনার ফল তারা নিজেরাই জানাত। এ সুযোগে তারা ফল প্রকাশের জন্যও বাড়তি টাকা দাবি করত এবং তা দিতে বাধ্য হতেন করোনায় অসহায় মানুষগুলো।

পুলিশের তেজগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ খান জানান, গ্রেপ্তার হুমায়ুন ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে জেকেজির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতের নির্দেশে গত বুধবার তাকে দুদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জেকেজির নামে ভুয়া সনদ হতো তা স্বীকার করলেও এর দায় তিনি হুমায়ুনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আরিফুল দাবি করছেনÑ জেকেজির নামে ভুয়া সনদ নেওয়ার কারণে হুমায়ুন ও তার স্ত্রীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উৎসঃ আমাদের সময়