অষ্টম শ্রেনীতে পড়ুয়া কিশোরী নাতনিকে ফুসলিয়ে অপহরণ ও বিয়ে করা সেই বৃদ্ধ নানা রিক্সাচালক সামছল হক কে গ্রেফতার করেছে কুমিল্লার লালমাই থানা পুলিশ। ১৪ মে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় উপজেলার হরিশ্চরস্থ একটি ভাড়া বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। ওই সময় তার হেফাজত থেকে অপহৃতা নাতনিকেও উদ্ধার করা হয়।
ভিকটিমের পরিবার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম পেরুল গ্রামের ইমান হোসেন ঢাকায় চাকরি করায় গ্রামে বসবাস করা তার পরিবারের দেখাশুনা করতেন পেরুল দীঘিরপাড়ার রিক্সা চালক সামছল হক। ইমান হোসেনের ২য় কন্যা (১৩) স্থানীয় পেরুল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সামছল হক নানা পরিচয়ে নিজের রিক্সায় তাকে নিয়মিত স্কুলে আনা নেওয়া করতেন। একপর্যায়ে সামছল হক নাতনি বয়সী স্কুল ছাত্রীর সাথে কথিত প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন অজুহাতে প্রায়ই তিনি ওই বাড়ীতে রাত্রীযাপন করতেন।
এনিয়ে স্থানীয়রা আপত্তি করলে তিনি প্রাপ্ত বয়স হলে কিশোরীর সাথে নিজের ছেলে মনিরের বিয়ে হওয়ার কথা এলাকায় প্রচার করেন।
কিন্তু গত ১০ মে রবিবার সামছল হক সবাইকে হতবাক করে ৫২ বছরের ছোট কিশোরীকে নিয়ে উধাও হয়ে যান। এনিয়ে স্থানীয়দের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ১১ মে সোমবার পেরুল দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান লোকমারফত সামছল হক ও কিশোরীকে ইউপি কার্যালয়ে হাজির করে বিস্তারিত জানতে চান। ওই সময় সামছল হক কিশোরীর প্রাথমিক শিক্ষা সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদ ও বিয়ের কাবিননামা উপস্থাপন করেন। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সনদ ও জন্মনিবন্ধনে তার জন্মতারিখ উল্লেখ রয়েছে ০২/০২/২০০২ইং। কাবিননামায় দেখা যায়, গত ১০ মে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ৭নং ওয়ার্ড এর নিকাহ রেজিষ্ট্রার মুজিবুর রহমান সরকারের কার্যালয়ে ৫লক্ষ টাকা মোহরানায় বই নং ৫৪, পৃষ্ঠা নং ২৮ ও ক্রমিক নং ৪৪০-এ তাদের বিয়ে রেজিষ্ট্রি হয়। এতে সামছল হকের জন্মতারিখ ০৩/০১/১৯৫৫ইং উল্লেখ রয়েছে।
১৪ মে বিকালে কিশোরীর মা তাছলিমা বেগম বাদী হয়ে সামছল হকের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২/৩জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধন ২০০৩) এর ৭/৩০ ধারায় লালমাই থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে লালমাই থানার এস আই মোশারফ হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ অভিযান চালিয়ে উপজেলার পেরুল উত্তরের হরিশ্চর স্কুল সংলগ্ন হাবিব স্যারের ভাড়া বাসা থেকে সামছল হক কে আটক করেন। এসময় পুলিশ তার হেফাজত থেকে ওই কিশোরীকেও উদ্ধার করেন।
লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, বৃদ্ধ সামছল হক কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার হেফাজত থেকে অপহৃতাকেও উদ্ধার করেছি। শুক্রবার সকালে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য কুমিল্লার বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে। ধৃত আসামীকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হবে।