রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম কাজল ও এসআই ওসমান আলীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন এক নারী। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলায় ‘ধর্ষণ চেষ্টার’ অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত ওই নারীর জবানবন্দি গ্রহণ করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

আজ বুধবার ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দারের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী নারী।

তবে এই অভিযোগটি মিথ্যা ও সাজানো বলে দাবি করেছেন যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম কাজল।

এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মো. সোহেল, মো. মিরাজ আলী ও মো. জিহাদ। মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন জাকির হোসেন হাওলাদার।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ওই নারী তার স্বামী-সন্তানসহ যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে সোহেল ও রিয়াদের বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই নারী তার ১০ বছরের ছেলে এবং ৬ বছরের মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন এবং ঘরে বসে টিভি দেখছিলেন।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে সোহেল, মিরাজসহ অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তার ঘরের দরজায় কড়া নাড়েন। এরপর ভুক্তভোগী নারী দরজা খুললে তার স্বামীর কথা জিজ্ঞাসা করেন তারা। কিন্তু স্বামী বাসায় নেই জানানোর পরে তারা ঘরে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা আটকে দেন। এরপর তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন এবং তা মোবাইলে ভিডিও করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, এ সময় ভুক্তভোগী ওই নারী কৌশলে দরজা খুলে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে আবারও জোর করে ঘরের ভেতরে নিয়ে মারধর করা হয়। পরে ওই বাসা থেকে চলে যাওয়ার সময় ওই নারীর স্বামীর সঙ্গে আসামিদের দেখা হলে তাকেও বেধরক মারধর করেন তারা। এ ঘটনার পরে ওই নারীর দুই সন্তানকে আটকে রেখে বাড়ির মালিক টাকা দাবি করেছেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।

মামলায় আরও উল্লেখ্য আছে, এমন ঘটনার ৬ দিন পরে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ওই নারী যাত্রাবাড়ী থানার ডিউটি অফিসারের কাছে গিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগটি তদন্ত করতে দেওয়া হয় এসআই ওসমান আলীকে। অভিযোগ দায়েরের পর ওই নারী এসআই ওসমান আলীর সঙ্গে দেখা করলে তিনি ওই নারীকে বলেন, ‘অভিযোগে অনেক ভুল ভ্রান্তি আছে তা আমি কেটে দিলাম। আর ধর্ষণের চেষ্টা করেছে এটা বাদ দিয়ে শ্লীনতাহানী করেছে সেটা উল্লেখ্য করে আবারও একটি লিখিত দিতে বলেন।’

পরে ওই নারী আবারও অভিযোগ দিলে এসআই ওসমান সেই বাসায় গিয়ে ওই নারীর সন্তানদের উদ্ধারসহ অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করে থানায় আনেন।কিন্তু পরে ওই নারী জানতে পারেন অভিযুক্ত তিনজনকেই থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর মামলা করার জন্য ওই নারীর কাছে স্যারের নাম করে এক লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছেন এসআই।

অবশেষে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই নারী ওসির সঙ্গে দেখা করলে তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দেননি এবং মামলা নেননি বলে ভুক্তভোগী তার অভিযোগে উল্লেখ্য করেছেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম কাজল দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে বলেন, ‘এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। ওই নারীর সাথে তার বাসা মালিকের দ্বন্দ্ব হয়েছে। পরে সেখানে এসআই ওসমানকে পাঠানো হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই নারী এমন অভিযোগ নিয়ে কখনো আমার সাথে দেখাও করেননি।’