নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আমানউল্লাপুর ইউনিয়নে শিবিরের হামলায় ছাত্রলীগের ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার ঘটনায় আহত ছাত্রলীগ কর্মী রাকিব হোসেন (২৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় ।

সোমবার (২ মার্চ) দুুপুর ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাকিব মারা যায়। নিহত রাকিব হোসেন আমানউল্লাপুর গ্রামের পাটোয়ারি বাড়ির সফিউল্লার ছেলে। আমানউল্লাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। সংঘর্ষে আহত ছাত্রলীগের অপর তিন কর্মী নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এ ব্যাপারে বেগমগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুন অর রশিদ নোয়াখালী সময় ডট কমকে জানান, নিহত রাকিবের পরিবারের লোকজন তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে থানায় জানিয়েছেন। রাকিবের মা ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৪ জনকে আটক করে।
আটককৃতরা হচ্ছে, কৃষ্ণাপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে ফারুক আহম্মদ (৪২), একই গ্রামের নুরনবীর ছেলে মাসুদ আলম (৩০),জয়নারায়নপুর গ্রামের আনোয়ার উল্যার ছেলে আকরাম হোসেন (২৪) ও ইব্রাহীম (৩০)। আইনানুযায়ী গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।অন্য আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, রোববার রাতে ইউনিয়নের নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর সড়কের পলোয়ান বাজারের একটি চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন তারা। হঠাৎ রাত ৮টার দিকে শিবিরের কয়েকজন এসে এলোপাতাড়ি গুলি করে। আতংকগ্রস্ত হয়ে স্থানীয়রা দিকবিদিক ছুটোছুটি করে পালিয়ে যায়।

এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা বাধা দিতে গেলে শিবিরের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় শিবিরের কয়েকজন দোকানে ঢুকে গুলি ও কুপিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের কর্মীদের। পরে হামলাকারীরা চলে গেলে স্থানীয় লোকজন আহতদের উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ সময় শিবিরের কর্মীরা সেখানে হামলা চালান। এতে গুলিতে ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পাঁচজন আহত হন। তাঁদের মধ্যে রাকিবুল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মারা যান।

বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি জানান, আলাইয়াপুর ইউনিয়নে স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এর আগেও দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার পাল্টাপাল্টি হামলা ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। গত রোববার রাতের ঘটনায় ছাত্রশিবিরের ফারুক আহম্মেদ, আকরাম হোসেন, মাসুদ আলম, ইব্রাহিমসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা সবাই এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

এদিকে হামলার বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য ছাত্রশিবিরের জেলা সেক্রেটারি হুমায়ুন কবিরের মুঠোফোনে ফোন দিয়ে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গতকাল বিকেলে জেলা ছাত্রশিবিরের (উত্তর) ই-মেইল থেকে পাঠানো একটি প্রতিবাদে ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় শিবিরের কেউ জড়িত নন বলে দাবি করা হয়। নাম ও স্বাক্ষরবিহীন এই প্রতিবাদে দাবি করা হয়, আমানউল্যাহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে ওই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে শিবিরের নেতা-কর্মীদের নাম জড়ানো হচ্ছে।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আমানউল্যাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান অভিযোগ করেন, ছাত্রশিবিরের কর্মীরা পূর্ববিরোধের জের ধরে সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে গত রোববার রাতে ছাত্রলীগ কর্মীদের ওপর অতর্কিতে গুলি করেছেন। এতে ছাত্রলীগের পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রাকিবুল ইসলাম গতকাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আরিফুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। ছাত্রশিবির নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। বাজারের অনেক লোক দেখেছে কারা প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে।