নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এক নারীসহ পাঁচ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা
আত্মীয়-স্বজন সেজে কারাগারে আটক জঙ্গিদের সঙ্গে দেখা করছে । তাদের মাধ্যমে শীর্ষ জঙ্গিদের বিভিন্ন নির্দেশনা ও পৌঁছে যাচ্ছে অন্য জঙ্গিদের কাছে। এছাড়াও অনলাইনে নিরাপদ (প্রোটেক্টেড) অ্যাপের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে জঙ্গি কার্যক্রম।

এসব তথ্য জানিয়ে শনিবার বিকালে কারওয়ান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব-৪।

আশুলিয়া ও ধামরাই থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৫ সদস্যের আটকের বিষয়ে বিস্তারিত জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক।

আটকেরা হলেন অলিউল ইসলাম সম্রাট ওরফে আব্দুল্লাহ, মোয়াজ্জিম মিয়া শিহাদ ওরফে আল্লাহর গোলাম, সবুজ হোসেন আব্দুল্লাহ এবাজ উদ্দিন, আরিফুল হক আরিফ ওরফে হৃদয় ও রাশিদা হুমায়রা।

সেসময় তাদের কাছ থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদী বই, লিফলেট, ডিজিটাল কনটেন্টসহ মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জেলে থাকা জঙ্গিদের নির্দেশনা বাইরে আসছে। গ্রেপ্তারের পর জঙ্গিরা জেলে বিভিন্ন সেলে থাকে। সেখানে কারও সঙ্গে দেখা করার সুযোগ কম। কিন্তু যখন আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে তখন পরোক্ষভাবে বাইরের জঙ্গিরা আত্মীয় পরিচয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করছে।’

‘‘সেখান থেকে বিভিন্ন বার্তা বাইরে আসছে এবং জঙ্গিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের সঙ্গে স্বজনরা দেখা করার সময় গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের থাকা উচিত। এটা হলে জেলখানা থেকে জঙ্গিবাদের যে তথ্য আসছে সেটা বন্ধ হবে।’’

তিনি বলেন, ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্যরা জেলখানা থেকেই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। জেলখানায় থাকাকালে মিলছে দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের সংস্পর্শ। সেখানেই জঙ্গি কার্যক্রমের দিক-নির্দেশনা পাচ্ছে এবিটি সদস্যরা। পরে জামিনে বেরিয়ে ফেসবুক ছাড়াও বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা এবং সদস্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এবিটির শীর্ষ পর্যায়ের স্থানীয় জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ ও পরিচিতি বাড়ানোর চেষ্টাও চলছে অনলাইন প্লাটফর্মে।’

জেলখানায় জঙ্গিদের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনদের দেখা করার ক্ষেত্রে প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

র‌্যাব-৪ অধিনায়ক বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত ১০টা থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এবিটির এই পাঁচ সদস্যকে আটক করে র‌্যাব-৪।

‘‘আটক অলিউল ইসলামের সঙ্গে কারাগারেই ইতোপূর্বে গ্রেফতার হয়ে সেলে বন্দি থাকা মাওলানা জসিমুদ্দীন রাহমানির অনুসারী শীর্ষ জঙ্গিদের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাদের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ অঞ্চলের আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন।

অলিউল এইচএসসি পাসের পর কিছুদিন স্থানীয় মসজিদে আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেন। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে সম্পৃক্ততার কারণে ২০১৯ সালে আশুলিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা হয়।’’

তিনি আরও বলেন, ‘আটক মো. মোয়াজ্জিম মিয়া ছাত্র জীবন থেকে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম তাকে আকৃষ্ট করতো। ধীরে ধীরে তিনি সশস্ত্র জঙ্গিবাদ এ অংশ গ্রহণে আগ্রহী হয়ে ওঠে। আটক মো. সবুজ হোসেন ও আরিফুল এইচএসসি পাশ করে স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক মো. মোয়াজ্জিম মিয়ার সরাসরি সংস্পর্শে আসে এবং তার কার্যক্রমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাথে জড়িয়ে পড়েন। কাতারে থাকাকালীন সময়ে জঙ্গিবাদে উদ্ধুদ্ধ হয়। বর্তমানে তিনি ধামরাইসহ মানিকগঞ্জ জেলার নারী শাখার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেলেন।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে এ র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, মোবাইল ফোন ছাড়া ট্যাবে ওয়াইফাই সংযোগের মাধ্যমে তিনি অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্রোটেক্টেড অ্যাপস ব্যবহার করে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতাদের সাথে তার অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন। তারা দীর্ঘ দুই থেকে তিন বছর ধরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে বিভ্ন্নি উগ্রবাদী গ্রুপের অ্যাডমিন