বিদেশ | তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 476 বার
বেঙ্গালুরুর যে সব এলাকা একসময় সরগরম থাকত, সেখান এখন যেন শুধু শূন্যতা। বেঙ্গালুরু ও সংলগ্ন বেলাথুর কলোনি, থুবুরাহল্লি, হারালুর, সরজাপুর এলাকাগুলো যেন এখন বাংলাদেশি শুধু নয়, বাংলাভাষীদের কাছে আতঙ্কের অপর নাম। অবৈধ বাংলাদেশিদের ধরপাকড় শুরু হতেই ভয়ে বেঙ্গালুরু ছেড়েছেন অনেকে। এবার বেঙ্গালুরুর বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার বিভিন্ন হোটেল থেকে মোছা হচ্ছে বাংলা লেখাও। যেন অলিখিত নির্দেশ জারি হচ্ছে, ‘এখানে বাংলা ও বাঙালির প্রবেশাধিকার নেই!’
বেঙ্গালুরুতে শিক্ষিত বাঙালি সমাজের পাশাপাশি প্রচুর শ্রমিক শ্রেণির মানুষও কাজে যান। কিন্তু এখন তাঁদের অনেকেই ছেড়ে চলে গিয়েছেন বেঙ্গালুরু। যাঁরা রয়েছেন তাঁরাও আতঙ্কে কাঁপছেন। অনেকেই বলছেন, মালদা, মুর্শিদাবাদ, ক্যানিং ইত্যাদি এলাকা থেকে যাঁরা পেটের দায়ে বেঙ্গালুরু যেত, তাঁরাও ফিরে গিয়েছে। এরপরও বিভিন্ন হোটেল থেকে মুছে ফেলা হয়েছে বাংলা শব্দ।
বেঙ্গালুরুর বেলাথুর কলোনি মোটামুটি ভাবে বাঙালি অধ্যুষিতই ছিল। সস্তার বাঙালি হোটেল এখানে অনেক। বিশেষত যাঁরা চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরুর সাইবাবা বা মণিপাল হাসপাতালে যান, তাঁদের অধিকাংশ মূলত এই এলাকাতেই থাকতেন। সেইসঙ্গে চিকিৎসা করাতে বাংলাদেশিরাও আসতেন ভিড় করে। এঁদের উপর ভিত্তি করেই একটা বড় অংশের বাঙালি করে খাচ্ছিল।
অনেকেই বলেন, এই অঞ্চল যেন একেবারেই কলকাতা। সেই বাঙালি ভরে থাকা অংশটাই এখন ধুধু করছে। হোটেল ফাঁকা। যেখানে খালি রুম পেতেই সমস্যা হত, সেখানে হোটেলের বেশিরভাগ রুমই ফাঁকা। ‘দাদা এত খালি হোটেল?’ প্রশ্নের উত্তরে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হোটেল মালিক বলেন, ‘বাঙালি রোগী আসা প্রচুর কমে গিয়েছে বিবিএমপি-র (বেঙ্গালুরু নগর পালিকে অর্থাৎ বেঙ্গালুরু পুরসভা) উৎপাতে। ছোটছোট কাজে আসা কর্মীরাও ফিরে গিয়েছেন।’
শুধু তাই নয়, হোটেলের দেওয়ালে বাংলা ভাষায় লেখার উপরে কালো করে কালি লেপে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি বাংলা লেখার উপরেই মোটা করে কালো কালি লেপে দেওয়া। কে করেছে এমন? উত্তরে বলেন, ‘পুরসভা। ওরা বলেছে এখানে খালি কন্নড়, ইংরেজি আর হিন্দিতে লেখা যাবে।’
বেঙ্গালুরুতে কাজ করতে যাওয়া অনেক বাঙালির কাছেই বিষয়টি ভীষণ আপত্তিকর ঠেকলেও কেউই বিশেষ মুখ খুলতে রাজি নন।
সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর কারিয়াম্মানা আগ্রাহারা এলাকায় বাংলাদেশিদের প্রায় ৩০০ ঝুপড়ি ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ঘরহারা হয়ে পড়েছেন শ্রমিকের কাজে আসা প্রায় ৩০০ মানুষ। যদিও এই ঘটনার নেপথ্যে বিজেপি বিধায়ক অরবিন্দ লিম্বাভালি রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। ফিরিয়ে দেওয়া হয় অনেক বাংলাদেশিকেও। কিন্তু বাংলাদেশিকে ফেরানো আর বাংলা ভাষা মুছে দেওয়া কি একই বিষয়? উত্তর পাওয়া যায় না বেঙ্গালুরুজুড়ে।
একদিকে যখন এমন চিত্র, তেমনি অন্যদিকে মহারাষ্ট্রে বাংলা বলায় ‘অবৈধ’ বাংলাদেশি বলে দেগে দেওয়া হয় তিনজন সংখ্যালঘু বাঙালিকে। মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা তাঁদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ তাঁদের জেরাও করেছে বলে অভিযোগ। যদিও বাস্তবে তাঁরা সকলেই পশ্চিমবঙ্গেরই বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে একজন হুগলির বাসিন্দা রোশন শেখ বলেন, ‘কত বার বললাম আমি বাংলাদেশি নয়, কিন্তু কেউ শুনতে চাইল না। এই দেশ আমার দেশ। আর নিজের দেশেই কিনা বিদেশি বলে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাচ্ছে!’
সূত্র: এই সময়
Leave a Reply