বিদেশ | তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 756 বার
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন দেশটির রাজা। মাহাথিরের পদত্যাগের পর তাকে আবার অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা জারি করেছেন আল সুলতান আব্দুল্লাহ রিয়াতুদ্দীন আল মুস্তাফা বিল্লাহ।
এদিকে মালয়েশিয়ায় ক্ষমতার রাজনীতিতে একের পর এক চমক আসছে। এক দিন আগে ড. মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে নতুন কোয়ালিশন সরকার গঠনের নানা জল্পনা আর তৎপরতা গতকাল হঠাৎ করে উবে গেছে। ক্ষমতার বাঁক বদলে আকস্মিকভাবে পদত্যাগই করলেন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির। দেশটির রাজা ইয়াং দি-পারতুয়ান আগং প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। পদত্যাগে সম্মতি দিয়ে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের আগ পর্যন্ত তাকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার রাজার সাথে বৈঠক করেন ক্ষমতাসীন জোটের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার ইব্রাহিম ও উপপ্রধানমন্ত্রী আজিজাহ ওয়ান ইসমাইল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মালয়েশিয়ায় ঘটতে থাকা বিরামহীন নাটকীয়তায় শেষ পেরেক গাঁথলেন দেশটির রাজা। এর মধ্য দিয়ে বর্তমান মন্ত্রিসভাও বাতিল হয়ে গেল। নতুন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। খবর মালয়েশিয়াকিনি, দি স্টার ও আলজাজিরার।
সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে রাজা ইয়াং দি-পারতুয়ান আগংয়ের সাথে দেখা করেন মাহাথির। দু’জনের মধ্যে কী আলোচনা হয় সে বিষয়ে কিছু না জানিয়ে প্রাসাদ ত্যাগ করেন মাহাথির। এর আগে বেলা ১টার দিকে রাজার কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। সরকারের প্রধান সচিব মোহাম্মদ জুকি আলি বলেন, দ্য ফেডারেল সংবিধানের ৪৩(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘নতুন সরকার গঠন ও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত দেশটির প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন মাহাথির মোহাম্মদ।’ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাহাথির আগামী ১০ দিন তার অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
মাহাথির মোহাম্মদের পদত্যাগের বিষয়ে সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে মাত্র দুই বাক্যের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, রাজার কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি। আনোয়ার ইব্রাহিম যেন ক্ষমতায় আসতে না পারেন; সে জন্য নতুন জোট গঠনের লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়েন তিনি। ক্ষমতাসীন জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া বারসাতু দলের চেয়ারম্যানের পদও ছেড়েছেন মাহাথির। গত রোববার মাহাথিরের দল পার্টি প্রিভুমি বারসাতু মালয়েশিয়া, আমনো, পিএএস, গাবুনগান পার্টি সারাওয়াক ও পার্টি ওয়ারিসান সাবাহ রাজার সাথে বৈঠক করে। এদের সাথে ছিলেন পিকেআর কর্তৃক বরখাস্ত হওয়া আজমিন আলী। এতে করে পাকাতান হারাপান জোট সরকারে ভাঙনের খবর ছড়িয়ে পড়ে।
দেশটির রাজনীতিতে দুই দিনব্যাপী নানা নাটকীয়তার পর পদত্যাগ করেন মাহাথির। ‘প্যাক্ট অব হোপ’ নামে আনোয়ার ইব্রাহিম যে জোট গঠন করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছিলেন; সেই জোটের ভেতরেই আনোয়ারবিরোধীরা এই নাটক মঞ্চস্থ করেছে। বিরোধী নেতারা এখন নতুন একটি জোট গঠন করতে যাচ্ছেন। অথচ মাহাথির মোহাম্মদ পদত্যাগ করলে তারই হওয়ার কথা ছিল মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। আনোয়ার ইব্রাহিম হলেন দেশটির জনপ্রিয় সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা। তবে সমকামিতার অভিযোগে বেশ কয়েক বছর কারাবন্দী থাকায় তার প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে জটিলতা আছে।
আনোয়ার ইব্রাহিম এবং ৯৫ বছর বয়সী বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির ছিলেন দীর্ঘ দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের মধ্যে সম্পর্ক দা-কুড়াল হলেও ২০১৮ সালে দুর্নীতিগ্রস্ত নাজিব রাজাকের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেন তারা। বিরোধী জোটের জয় হয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মাহাথির মোহাম্মদ।
১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা ২২ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। তার শাসনামলে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও স্বজনপ্রীতিসহ দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে মাহাথির মোহাম্মদ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে। কিছু দিন থাকার পর ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতিতে তাকে প্রধানমন্ত্রী করা হলেও, ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি এ নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ জানাচ্ছিলেন না।
সোমবার সকাল পর্যন্ত দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের ভাগ্য ছিল অনিশ্চিত। পদত্যাগের কিছুক্ষণ আগে মাহাথিরের দল বারসাতু পার্টি ঘোষণা দেয়, ক্ষমতাসীন জোট পাকাতান হারাপান থেকে বের হয়ে যাচ্ছে তারা এবং তাদের ১১ জন আইনপ্রণেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। ফলে ‘প্যাক্ট অব হোপ’ নামের ওই জোটে ভাঙন ধরে এবং নতুন একটি জোট গঠনের খবর শোনা যেতে থাকে। চার পাশে গুঞ্জন ওঠে নতুন এই জোট গঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাহাথির। দেশটির রাজনৈতিক মহলে এমন খবর চাউর হলেও খোদ আনোয়ার ইব্রাহিমের দাবি, বিষয়টি সত্য নয়। তিনি বলেন, মাহাথির তাকে নিশ্চিত করেছেন, তিনি এর (নতুন জোট গঠন) মধ্যে নেই। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, নতুন এই জোটে থাকবে ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন, যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের দল। দলটি গত নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যুত হয়।
‘প্যাক্ট অব হোপ’ নামের ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দল ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন পার্টির (ডিএপি) মহাসচিব লিম গুয়ান ইয়ং বলেছেন, মাহাথির মোহাম্মদ তাকে বলেছেন, সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যে কূটচাল শুরু হয়েছিল তা ঠেকাতেই তিনি পদত্যাগ করছেন। তার এই বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা আরো ঘোলা হয়েছে। বামপন্থী দল হিসেবে পরিচিত ডিএপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে যে দলকে (ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন-উমনো) ক্ষমতা থেকে সরাতে আমরা কাজ করেছি, সেই দলের সাথে কাজ করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মাহাথির মোহাম্মদ।’ তিনি বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় জরুরি এক বৈঠক শেষে মাহাথির মোহাম্মদকে আবারো প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার দল ডিএপি। মালয়েশিয়ার রাজনীতির ময়দানে এই নাটকের শেষ কোথায় হবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটিতে আগাম নির্বাচনও আহ্বান করা হতে পারে।
মাহাথিরকে দোষ দিতে নারাজ আনোয়ার : এ দিকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য মাহাথির মোহাম্মদকে দায়ী করতে নারাজ ক্ষমতাসীন জোটের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি দাবি করেছেন, সকালের বৈঠকে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব না ছাড়তে অনুরোধ করেছিলেন। তবে মাহাথির সেই অনুরোধ রাখেননি। চলমান অস্থিরতার জন্য মাহাথিরকে দায়ী করা যায় কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার বলেন, সাবেক হিসেবে তাকে আর দোষারোপ করা যায় না। তিনি আরো বলেন, মাহাথির আগের দিন আমাকে যা বলেছিলেন, আবারো সেটিই বলেছেন যে, তিনি এতে (রাজনৈতিক অস্থিরতায়) কোনো ভূমিকা রাখেননি। দেশটির অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনোয়ার দায়িত্ব পাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই আইনপ্রণেতা মৃদু হেসে বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টা দেখছি।’
Leave a Reply