র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-৭) সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান নিখোঁজের প্রায় দেড় বছর পর নিজ বাসায় ফিরেছেন । ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর মিরপুরের নিজ বাসায় ফিরে আসেন তিনি। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তবে, এতোদিন তিনি কোথায় ছিলেন সে বিষয়ে কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় পরিবারও তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেনি বলে জানা গেছে।

এসআই মনিরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাতে হাসিনুরের স্ত্রী শামীমা আক্তার ফোন দিয়ে জানায়, হাসিনুর বাসায় ফিরে এসেছেন। সুস্থ আছেন। তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় তার চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই হাসিনুরকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া হবে। এসআই আরও বলেন, এখনও তার সঙ্গে দেখা করিনি। তিনি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তার সঙ্গে কথা বলব। তিনি বাসার বাইরে আছেন। স্বজনরা তার সঙ্গে রয়েছেন।

হাসিনুরের স্ত্রী শামীমা আক্তার জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে কোন একটা সময়ে তার বাসার কলিং বেল বেজে ওঠে। দরজা খুলে দেখেন সামনে হাসিনুর। শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ। তবে এত দিন কোথায় ছিলেন সে সম্পর্কে কিছু বলেননি। পরিবারও জানতে চায়নি। তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে পারে এমন কোন কিছুই পরিবার জিজ্ঞাসা করতে চাইছে না। হাসিনুর ফেরত এসেছেন এটাই আমাদের পরিবারের জন্য বড় বিষয়। সবার কাছে দোয়া প্রার্থী।

শামীমা আক্তার আরও জানান, ফেরার সময় হাসিনুরের প্রেসার বেশি ছিল। প্রেসারের ওষুধ দেয়া হয়েছে। এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন। সে নিয়মিত চেকআপের মধ্যে ছিল অতীতে। তার সেই নিয়মিত চেকআপের জন্য চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট রাত ১০টার দিকে মিরপুরের পল্লবীর ডিওএইচএসের বাসার সামনে থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় হাসিনুরকে। তিনি র‌্যাব-৫ ও র‌্যাব-৭ এর সাবেক কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) ছিলেন। এছাড়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে থাকাকালে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন হাসিনুর রহমান।

তার আগে ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক ছিলেন তিনি। সে সময় তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নিশ্চিত করেছিল র‌্যাব। পরে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় চাকরিচ্যুত হয়ে কয়েক বছরের সাজা খাটেন হাসিনুর। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় হাসিনুরের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার নজরে ছিল। সেনাবাহিনীতে চাকরির সময় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় দন্ডিত হয়ে পাঁচ বছরের জেল খেটে ২০১৪ সালে মুক্তি পেয়েছিলেন। এছাড়া বিজিবিতেও বেশকিছু দিন দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গত বছরের ৯ আগস্ট হাসিনুর রহমানের নিখোঁজের বিষয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন, হাসিনুর রহমানের নিখোঁজের বিষয়টি নলেজে আছে। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের পক্ষ থেকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। হাসিনুর রহমানের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে কারও কাছে কোন তথ্য থাকলে তা র‌্যাবকে জানাতে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। জানা গেছে, ২০০৯ সালের অক্টোবরে হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র শিক্ষক ও হিযবুত তাহরীরের উপদেষ্টা গোলাম মহিউদ্দিন গ্রেফতার হন। তার জবানবন্দি থেকেই হাসিনুর রহমানের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া যায়। তখন হাসিনুর রহমান র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক ছিলেন।