দেশের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সেকেন্ড ইন কমান্ড শাকিলকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। র‌্যাব জানিয়েছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে শাকিলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে শাকিলের পরিবার দাবি করেছে, শাকিলকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাকিলকে গত বৃহষ্পতিবার ধরে নেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শাকিল আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপর এক মাফিয়া শাহরিয়ার সোহেলের বোন জামাই। দুই সপ্তাহ আগে শাকিল দুবাই থেকে ঢাকায় আসে।

র‌্যাব জানায়, র‌্যাব-২ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের ডানহাত নামে পরিচিত সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ মোঃ মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাকিল ওরফে শাকিল মাজাহার(৩৫)রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলাকালে সন্দেহভাজন হিসেবে শাকিলকে আটক করা হয়। শাকিল ফেনীর দাগন ভূইয়া থানার সাদেকপুর গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে। তার কাছ থেকে ২টি বিদেশী পিস্তল, ২ টি ম্যাগাজিন ও ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে র্দীঘদিন যাবৎ শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের পক্ষে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটিত করে আসছে। ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় এরছাত্র রাজনীতি শুরু করে। পরবর্তীতে ঢাকা মহানগর এর ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত হয়। ২০০৯ সাল থেকে যৌথভাবে টেন্ডার কাজে জড়িত হয়ে পড়ে। রেলওয়েতে ছোট ছোট কাজের টেন্ডার নিয়ে কাজ করত। এভাবে ২০১০-২০১২ সাল পর্যন্ত বই টেন্ডার নিয়ে কাজ করে। ২০১৩ সালে গ্রামের বাড়ী ফেনীতে চলে যায় এবং পারিবারিক দোকান এর কাজ এর পাশাপাশি গ্রাম্য রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৫ সালে পুনরায় ঢাকায় আসে এবং রাজনীতি শুরু করে কিন্তু যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূইয়ার সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে এবং রেলওয়ের টেন্ডার নিয়ে বিরোধ তৈরী হয়।

২০১৬ সালের জুন মাসে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর যুবলীগের সহ-সম্পাদক রাজিব হত্যার এজাহারে তার নাম আসার ৪ দিন পরে শাকিল চীনে চলে যায়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত চীনে বসবাস করে এবং কার্গো সার্ভিসে কাজ করে। ২০১৮ সালে চীন থেকে দুবাই চলে যায় এবং চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দুবাই ছিল। সেখানে থাকা অবস্থায় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সাথে পরিচিত হয় এবং পরবর্তীতে জিসান এর পক্ষে লেবার ব্রোকারের কাজ করত। দুবাইতে জিসান এর সাথে লেবার আবাসিক ভবনে ছিল সেই ভবনে থেকে তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পরিকল্পনা করত এবং সেখান থেকেই তাদের বিভিন্ন সহযোগীর মাধ্যমে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত।

শাকিল এ বছরের ১২ জানুয়ারি দেশে আসে। তার দেশে আসার উদ্দেশ্য হল জিসান এর নির্দেশ ও সহযোগীতায় বাংলাদেশে তার সন্ত্রাসী কার্যক্রম নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করে আন্ডার-ওয়ার্ডে নেতৃত্ব দেওয়া। এ প্রেক্ষিতে শাকিল রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং ভর্তির উদ্দেশ্য ছিল হাসপাতালে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা সৃষ্টি করে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। র‌্যাবের অভিযানের ফলে তার এ চেষ্টা নসাৎ হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শাকিল ঢাকার আন্ডার ওয়ার্ল্ডের আরেক মাফিয়া সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শর্টগান সোহেলের ভগ্নিপতি। ঢাকা মহানগর যুবলীগের সাবেক সভাপতি ঈসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও খালিদ মাহমুদ ভূইয়া গ্রেফতার হওয়ার পর সোহেল ঢাকায় আসেন। ঢাকায় তিনি বিভিন্ন মহলের সাথে যোগাযোগ করেন এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। তিনি যুবলীগের বড় পদ পদবীর জন্য রাজনৈতিক নেতাদের সাথেও লবিং তদ্বির করে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।

জিসানের সাথে আঁতাত করে এরা বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়। এদের দখলে রয়েছে রাজধানীর রামপুরা এলাকার ডিশ ব্যবসা। ক্রিস্টাল ক্যাবল নেটওয়ার্ক নামে ডিশ ব্যবসা ও ইন্টারনেট ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে জিসানের ক্যাশিয়ার তাসিন, ডিশ রাজু, জাকির ও বকুল। এরা ব্যবসার আড়ালে জিসানের নামে নানা অপরাধী কর্মকান্ড করে আসছে। র‌্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত শাকিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।