‘মুনিয়া বাহিনী’ নামে একটি সন্ত্রাসী দলের অপতৎপরতা বেড়েই চলছে সৈকত সাগর কন্যা কক্সবাজারে। এরা সাগরপাড়ের সরকারি প্লট দখল করে সেখানে ‘টর্চার সেলও’ স্থাপন করেছে। সেখানে নিরীহ লোকজনকে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে এক প্লট পাহারাদারের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তিনি সন্ত্রাসীদের ভয়ে যেতে পারছেন না থানায়। পারছেন না হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুনিয়া বাহিনীর রয়েছে ২৫/৩০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসীর দল। এদের প্রধান টার্গেট গণপূর্ত প্লট, ডেভেলপারের নির্মাণাধীন ভবন অথবা ডেভেলপার ও জমির মালিকদের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে এরকম হোটেল-মোটেল ভবন। এদের দখলে রয়েছে সৈকত আবাসন ও হোটেল জোনের অনেক হোটেল এবং গণপূর্তের প্লট।

অভিযোগ রয়েছে, বাহিনীর নেপথ্যে রয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর নাসিমা আকতার বকুল। তিনি কক্সবাজার জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী। বাহিনী প্রধান শাহাদত হোসেন মুনিয়া নামের সন্ত্রাসী ওই বিএনপি নেত্রীর ভাই। তবে বিএনপি নেত্রী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জানা গেছে, পণপূর্তের সি ব্লকের ৪৭ নম্বর প্লটের পাহারাদার আবদুল মালেক (৪২)। টেকনাফের হ্নীলার বাসিন্দা তিনি। এক সপ্তাহ আগে মালেককে মুনিয়া ডেকে নিয়ে যায় একই ব্লকের ৬০ নম্বর প্লটের সেই টর্চার সেলে। ৬০ নম্বর প্লটের মালিক হলেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউনুছ হোছাইন নামে এক ব্যক্তি। তিনি চট্টগ্রাম সরকারি পলিটেকনিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যাপক। প্লটটি এক ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তি করে ভবন তৈরির জন্য দিয়েছিলেন ইউনুস। কিন্তু ডেভেলপার চুক্তি মতে ভবন নির্মাণ করেননি। প্লট মালিক যথারীতি এতে বেশ কিছু দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দেন। কিন্তু সন্ত্রাসী মুনিয়া দলবল নিয়ে একদিন দখল করে নেয় ৬০ নম্বর প্লটটি।

প্লট মালিক প্রকৌশলী ইউনুস রবিবার পুলিশ সুপারের কাছে জেলা বিএনপি নেত্রী নাসিমা আকতার বকুল ও তাঁর সন্ত্রাসী ভাই শাহাদত হোসেন মুনিয়াসহ ৩০/৩৫ জনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে বলা হয়, সেই প্লটের সব দোকান দখলে নিয়ে সেখানে অফিস করেছেন মুনিয়া। এমনকি সেই প্লটে তিনি নির্মাণ করেছেন টর্চার সেল। সেখানে প্লট পাহারাদার মালেককে এক সপ্তাহ আগে রাত ১১টা থেকে পৌনে একটা পর্যন্ত গাছ ও লোহার রড দিয়ে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। মুনিয়ার পৈশাচিক নির্যাতনে মালেকের একটি পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। তাঁর শরীরে অমানবিকতার চিহ্ন জ্বলজ্বল করছে। গরিব লোকটি মুনিয়ার হুমকির মুখে পুলিশের আশ্রয় নিতে পারছেন না। পারছেন না চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যেতেও। ঘরেই আটকা পড়েছেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক মাসুম খান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ গতকাল নির্যাতিত মালেকের ঘরে গিয়ে তাঁর খোঁজ-খবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন।

পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘আমি সন্ত্রাসী বাহিনীটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি।’

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মো. শাহজাহান কবির বলেন, ‘ইতোমধ্যে সন্ত্রাসী শাহাদত হোসেন মুনিয়ার অপরাধের যাবতীয় বিবরণ লিপিবদ্ধ করে একটি ভলিয়্যুম বাইন্ডিং করা হয়েছে। মুনিয়ার বিরুদ্ধে ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। রয়েছে ভুট্টো হত্যা, শাহীন হত্যা থেকে শুরু করে রাহাজানি, সন্ত্রাসী, অস্ত্র, দাঙ্গাহাঙ্গামা, দখলবাজি থেকে আরো হরেক রকমের অপরাধের খতিয়ানও।’উৎস -কালের কন্ঠ