নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় মাদরাসার সুপার কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক শিশু শিক্ষার্থী (১১)। ওই শিশু শিক্ষার্থী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের চরআমতলা কোনাবাড়ী গ্রামের ফারুক মিয়ার ছেলে আব্দুল হালিম সাগর কয়েক বছর আগে রোয়াইলবাড়ী বাজার সংলগ্ন আশশরাফুল উলূম জান্নাতুল মাওয়া মহিলা মাদরাসার প্রতিষ্ঠা করে সুপারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। কয়েক মাস আগে মাদরাসায় একই এলাকার এক অসহায় এতিম ছাত্রীকে ধর্ষণ করে মাদরাসা সুপার। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী ৩/৪ মাসের গর্ভবতী হয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে কেন্দুয়া থানার পেমই তদন্ত কেন্দ্রের এসআই সুজন ব্যানার্জী জানান, মাদ্রাসাটির সুপার আব্দুল হালিম (৩৫) তার মাদ্রাসার শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণ করে বলে জানা গেছে। ফলে মেয়েটি এখন ৩/৪ মাসের অন্ত:সত্ত্বা।

তিনি বলেন, মাদরাসার সুপার বিষয়টি টের পেয়ে ওই ছাত্রীর পেটের বাচ্চাটিকে নষ্ট করতে গত বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রীকে ওষুধ খাওয়ান। এতে মৃত বাচ্চা প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর প্রথমে কিশোরগঞ্জ হাসপাতালে ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে শুনেছি।

এসআই আরও বলেন, এ ঘটনার পর শনিবার রাতে ধর্ষকের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ধর্ষকসহ পরিবারের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মনে হচ্ছে সবাই ঘটনার পর পালিয়ে গেছে।

কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুজ্জামান বলেন, গত রাতেও পুলিশ ধর্ষককে ধরার চেষ্টা করেছে। ধর্ষকসহ সবাই পালিয়ে গেছে। তাকে ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর বোন বলেন, ধর্ষণ করার পর আমাকে হুমকি দিয়ে বলেছে, এ ঘটনা যদি কাউকে বলে দেই, তাহলে আমার বোনকে মেরে ফেলবে।

ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, আমার মেয়ে মাদ্রাসার বাথরুমে যাওয়ার সময় ওই শিক্ষক ওর পেছনে দিয়ে যায়। এক পর্যায়ে ওর মুখ চেপে ধর্ষণ করে, এবং এ ঘটনা যেনো কাউকে না জানায় সে জন্য ভয়ভীতি দেখায়।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী এ তার সঙ্গে ঘটা এ বর্বরতার বিচার দাবি করেন।

নির্যাতিতা বর্তমানে শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। পাশাপাশি মেয়েটিকে কাউন্সিলিং করা হচ্ছে।

নেত্রকোনা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার একরামুল হাসান বলেন, আমরা যতটুকু পারছি চেষ্টা করছি ওকে মেন্টাল সার্পোট দেয়ার জন্য। যাতে ওই বিষয়টা থেকে সে বের হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠে।

নেত্রকোনা ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের প্রোগ্রাম কর্মকর্তা এস এম এ সেলিম বলেন, কলার সাথে কোন একটা জিনিস মিশিয়ে তাকে খাওয়ানোর পর তার রক্তপাত শুরু হয়। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের পক্ষ থেকে তাকে আইনি পরামর্শ ও সেবার বিষয়ে সহায়তা করছি।

এ ঘটনায় কেন্দুয়া থানায় একটি মামলা করেছেন নির্যাতিতার বাবা। অভিযুক্ত আব্দুল হালিম সাগর এখনো পলাতক।