অপরাধ সংবাদ | তারিখঃ জানুয়ারি ২, ২০২০ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 420 বার
বহুল আলোচিত বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ অভিযুক্তপত্রভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর গতকাল বুধবার বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান শুনানি শেষে অভিযোগ গঠন করে এ আদেশ দেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু সাংবাদিকদের বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য আগামী ৮ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ মামলার ৩৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে বলে আদালত বলেছেন।
কিসলু আরো জানান, সাইমুন নামের এক আসামির জামিনের আবেদন করেছিলেন তাঁর আইনজীবী। কিন্তু আদালত আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। এ ছাড়া অভিযোগ গঠনের সময় প্রত্যেক আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। আদালত সবার আবেদন নামঞ্জুর করেন।
সদ্য বিদায়ী বছরের ২৬ জুন বরগুনার সরকারি কলেজের সামনে রিফাতকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বাবা আবদুল হালিম শরীফ ওরফে দুলাল শরীফ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো চার-পাঁচজনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। এরপর ২ জুলাই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে (১৯) প্রধান সাক্ষী করা হয়। তবে একপর্যায়ে রিফাতের বাবা পুত্রবধূকে অভিযুক্ত করে তাঁর গ্রেপ্তার দাবি করেন। এরপর পুলিশ মিন্নিকে টানা ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেপ্তার দেখায়। মিন্নি হাইকোর্ট থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন নিয়ে এখন বাবার বাড়িতে আছেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়। গত ৬ নভেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের অভিযোগপত্র বিচারের জন্য প্রস্তুত করে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠান জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম আদালত।
প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের মধ্যে মো. মুসা (১৯) নামের একজন এখনো পলাতক। অন্যরা হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯), কামরুল ইসলাম সাইমুন (২১)।
গতকাল অভিযোগ গঠনের ধার্য দিনে কারাগারে থাকা আট আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা মিন্নিও বাবার সঙ্গে আদালতে আসেন। শুনানি শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়। দুপুর ২টার দিকে অভিযোগ গঠনের পর আট আসামিকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রথম সাত আসামি যথাক্রমে রিফাত ফরাজী, রাব্বি আকন, সিফাত, টিকটক হৃদয়, হাসান, মুসা ও মিন্নির বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ৩০২ এবং ৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
এ ছাড়া রাব্বি ও সাইমুনের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে ২১২ এবং ১২০-এর বি-এর ১ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়ছে। অন্য আসামি সাগরের বিরুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া মিন্নির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার পর তাঁর আইনজীবী মো. মাহবুবুল বারী আসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিন্নিকে যাতে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় সে জন্য আমি আদালতে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আদালত সে আবেদন নামঞ্জুর করে মিন্নির বিরুদ্ধেও চার্জ গঠন করেছেন। এর বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব।’
মন্তব্য
Leave a Reply