জেলা সংবাদ | তারিখঃ জানুয়ারি ১, ২০২০ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 896 বার
ধীনতার দীর্ঘ ৪৮ বছরেও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে প্রথম গণহত্যার শিকার ফরিদ আহম্মদ ওরফে ফরিদ টিটি ও তার সন্তান ফয়েজ আহম্মদ এর রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি মেলেনি। তাদের নাম উঠেনি শহীদদের তালিকায়, গড়ে উঠেনি কোন ম্মৃতি স্তম্ভ । গণহত্যার শিকার ফরিদ টিটি ও তার সন্তানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবী জানিয়েছে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ও এলাকাবাসী।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনার পর চট্টগ্রাম রেলওয়েতে কর্মরত ফরিদ টিটি দেশ মাতৃকার টানে চাকরী ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে এসে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সোর্স হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং ওই সময় বড় একটি বাংলাদেশী পতাকা তৈরী করে বাড়িতে উত্তোলন করেন। এতে তিনি এ দেশীয় রাজাকার ও পাক বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হন। এদিকে ২২ এপ্রিল সকালে পাক বাহিনী কুমিল্লা থেকে বেগমগঞ্জের চৌরাস্তার ক্যাম্পে আসার পথে মুক্তিযোদ্ধারা চৌমুহনী-লক্ষীপুর খালের উপর নির্মিত কালাপোল নামের সেতুটি আগুনে ধ্বংস করে দেয়। বাঁধা পেয়ে পাক বাহিনী বেগমগঞ্জের মীরওয়ারিশপুরে সাময়িক ঘাঁটি করে পাশ^বর্তী বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর, খুন, ঘুম ও অগ্নিসংযোগ করে। অপারেশন চার্স লাইটের নামে ২২ এপ্রিল সন্ধায় তারা ফরিদ টিটির বাড়ি ঘেরাও করে এলোপাতাড়ি ব্রাসফায়ার করলে ফরিদ টিটি ও তার ছেলে ফয়েজ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। স্বাধীনতার এতো বছরেও তাদের নাম উঠেনি শহীদের তালিকায়, গড়ে উঠেনি তাদের স্মরনে কোন স্মৃতি স্তম্ভ । নতুন প্রজন্ম জানেই না এই দ্ইু শহীদের কথা। এতে হতাশা ওই পরিবারের সদস্যরা। তাই গণহত্যার শিকার ফরিদ টিটি ও তার সন্তান ফয়েজের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও তাদের নামে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মানের দাবী জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে পরিবারের সদস্যরা ও এলাকাবাসী।
গণহত্যার শিকার ফরিদ টিটির বেঁচে যাওয়া সন্তান এডভোকেট এবিএম ফারুক আহম্মদ ও ফরহাদ আহম্মদ জানান, আমরা কোন সুযোগ সুবিধা চাই না। আমরা চাই আমাদের বাবা ও ভাই যে পাক বাহিনীর হাতে গণহত্যার স্বীকার হয়েছেন তার স্বীকৃতি। আমরা আশা করি বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পরিবারকে শহিদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। নোয়াখালী জেলা মুক্তিযুদ্ধ ম্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি এনায়েত বাবুল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন দপ্তরে অনেক আবেদন নিবেদনের পরও কাজ হয়নি। ফলে নতুন প্রজন্ম ভূলতে বসেছে দেশের এই দুই বীর সন্তানকে। আমরা দ্রুত তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই। বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নুর হোসেন মাসুদ বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমিও দাবী করছি গণহত্যার শিকার ফরিদ টিটি ও তার সন্তানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হোক। বেগমগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হোসেন বাঙ্গালী বলেন, ফরিদ টিটি ও তার সন্তান গণহত্যার শিকার হয়েছেন সত্য। তাদের নাম তালিকাভূক্ত করার ব্যাপারে মন্ত্রনালয়ের চিঠির অপেক্ষায় রয়েছি আমরা । চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা পেলে অবশ্যই তাদের তালিকাভূক্ত করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে এই দুটি বীর সন্তানের আত্মত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরার স্বার্থে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও স্মৃতি স্তম্ভ নির্মানের উদ্যোগ নেবে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
Leave a Reply