চুলপড়া সমস্যার চিকিৎসা যত বেশি জরুরি, তার চেয়ে বেশি জরুরি রোগীর আস্থা ও ধৈর্য। কারণ ধৈর্য ধরে যথাযথ চিকিৎসা নিতে পারলে অবশ্যই উপকার পাওয়া যাবে।

চুলপড়া সমস্যা সব বয়সেই হতে পারে। পুরুষ কি নারী অথবা কিশোর-কিশোরী। চুলপড়া সমস্যা কোনো রোগ নয়। যে কোনো রোগ অথবা সমস্যা থেকে চুল পড়তে পারে।

মেল প্যাটার্ন বল্ডনেস হচ্ছে পুরুষের চুলপড়া সমস্যার অন্যতম একটি ধরন। সাধারণত জিন ও পুরুষ সেক্স হরমোন হিসেবে খ্যাত টেস্টেস্টেরনই দায়ী। এ ধরনের চুলপড়া সমস্যাকে অ্যাড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া বলা হয়। এ ধরনের চুলপড়া ডায়াগনোসিস করতে খুব একটা সমস্যা হয় না। হেয়ারলাইন বা কপালের ওপরের অংশের চুল ফাঁকা হয়ে যায় এবং মাথার উপরিভাগের অংশে চুল কমে যায়। এ ক্ষেত্রে চুলপড়ার ধরন দেখেই বোঝা যায়, হরমোনাল বা বংশগত কারণে চুল পড়ছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ হরমোনজনিত চুলপড়া সমস্যার কোনো ভালো চিকিৎসা নেই। কারণ হরমোন পরিবর্তন করে চুলপড়া সমস্যার চিকিৎসা যৌক্তিক নয়। তবে মেলপ্যাটার্ন বল্ডনেস বা পুরুষের চুলপড়া সমস্যার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এ পর্যন্ত দুটি ওষুধ অনুমোদন দিয়েছে। আশার কথা, এ দুটি ওষুধই এখন বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে মিনক্সিডিল। মিনক্সিডিল হচ্ছে এক ধরনের লোশন বা সলিউশন, যা সরাসরি মাথার ত্বকে ব্যবহার করতে হয়। এ ওষুধটি হেয়ার ফলিকিউল স্টিমুলেট করে এবং চুল গজাতে সাহায্য করে।

এ ছাড়া অ্যাড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়ায় আরেকটি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এটি হচ্ছে ফিনাস্টেরাইড। এটা এক ধরনের মুখে খাবার ওষুধ। দৈনিক ১ মিলিগ্রাম করে এ ধরনের ওষুধ সেবন বাঞ্ছনীয়। এ ওষুধটি মিনক্সিডিল অপেক্ষা ভালো এবং চুলপড়া কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি চুল গজাতেও কার্যকর।

একটা কথা মনে রাখতে হবে, শুধু ওষুধ দিয়েই চুলপড়া সমস্যার সমাধান হবে না। চুলপড়া সমস্যার প্রকৃত কারণ জেনে চিকিৎসার পাশাপাশি যথাযথ পরিচর্যা করতে হবে। আর রোগীকে আস্থাশীল করতে না পারলে রোগীও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারেন।

তাই চুলপড়া সমস্যার চিকিৎসা যত বেশি জরুরি তার চেয়ে বেশি জরুরি রোগীর আস্থা ও ধৈর্য। কারণ ধৈর্য ধরে যথাযথ চিকিৎসা নিতে পারলে অবশ্যই উপকার পাওয়া যাবে।

লেখক: ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান
অধ্যাপক বিভাগীয় প্রধান, চর্মরোগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
উৎস -সমকাল