জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 743 বার
বিজয়ের মাসেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর হাতে নির্যাতিত ও নিপীড়িত কুমিল্লার আলোচিত বীরাঙ্গনা আফিয়া খাতুন চৌধুরী ওরপে খঞ্জনি বেগম ।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় কুমিল্লা শহরের পূর্ব বাগিচাগাঁও বড় মসজিদ সংলগ্ন বাসায় মারা যান তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিতা এই বীর নারীর মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি এক মেয়ে রোকসানা বেগম, জামাতা ও নাতি-নাতনিসহ আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন।
আজ মঙ্গলবার সকালে কুমিল্লার পূর্ব বাগিচাগাঁও জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে দাফনের জন্য তাকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সোনাপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। দুপুরে সোনাপুরে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। দাফনের আগে তাঁকে গার্ড অফ অনার ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়।
জানা যায়, আফিয়া খাতুন খঞ্জনির বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথ দিঘির সোনাপুরে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় দু-তিনজন রাজাকার স্বামীহারা খঞ্জনিকে ধরে নিয়ে যায় জগন্নাথ দীঘি ক্যাম্পে। সেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক হাবিলদারের সঙ্গে তাঁকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয় ওই হাবিলদার, তবে ক্যাম্পটি দখলে থাকে পাকিস্তানি সেনাদের আর ওই ক্যাম্পেই আটকে রাখা হয় খঞ্জনিকে।
মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তি পেয়ে খঞ্জনি তার মৃত স্বামীর বাড়িতে ফিরে গেলে গ্রামের লোকজন তাঁকে ‘নষ্টা নারী’ আখ্যা দিয়ে গ্রাম ছাড়া করে। পরে খঞ্জনির আশ্রয় মেলে ফেনী সদর উপজেলার বড়ইয়া গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে তাঁর একমাত্র ভাই আবদুর রহমানের কাছে।
জানা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৩ বছরে কেউ খোঁজ নেয়নি খঞ্জনির, দেয়নি কোনো স্বীকৃতি। পরে ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর আফিয়া খাতুন খঞ্জনিকে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি কুমিল্লার তৎকালীন জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল এক খণ্ড খাসজমি প্রদান করেন।
বীরাঙ্গনা খঞ্জনি ১৯৩৯ সালে ফেনী জেলার বরইয়া চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম হাসমত আলী চৌধুরী ও মায়ের নাম মাছুদা খাতুন। ১৯৬৩ সালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথ দীঘি ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের রুহুল আমিন মানিক ওরফে হেকমত আলীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯৬৬ সালে স্বামী হেকমত আলী চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত অবস্থায় মারা যান। তাদের সংসারে এক মেয়ে ও এক ছেলে ছিল।
Leave a Reply