জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ ডিসেম্বর ২০, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 922 বার
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে নিজের এলাকায় যেতে লজ্জা লাগে। শুধু রাস্তা তৈরির বহু প্রকল্প নেয়া হয়, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণে নজর দেয়া হয় না। এটা ঠিক নয়। রাস্তার কারণে এলাকার মানুষ আমাকে প্রতিদিন গালি দেয়।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই, তার পরও শুধু তারাই কাজ পায়। এদের কারণে বিদেশি ভালো প্রতিষ্ঠানও কাজ পায় না।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘মহাসড়কের লাইফটাইম: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন, লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ইংল্যান্ড, শ্রীলংকায় কোথায় পাহাড়-পর্বত রয়েছে। আমরা তো মহাসাগর বিস্তৃত দেশেও দেখি। তারাও তো রাস্তা করে, সেখানে রাস্তার লাইফটাইম ৫০ বছর। তাহলে আমরা কেন পারব না।’
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘রাস্তার বিষয়ে নদীমাতৃক দেশের কথা আর কোনো দিন কোনো মিটিংয়ে বলবেন না, এটা ঠিক নয়। এগুলো কাকে বোঝাচ্ছেন? নিজেরা কাজ করতে পারবেন না, করেন না, হয় বোঝেন না, না হয় করেন না; দুটোর একটা। করতে চাইলেই করা যায়। আমার এলাকায় যদি যান রাস্তা দেখে কান্না আসবে। মানুষ আমাকে প্রতিদিন গালি দেয়। আমি গ্লাস নামাতে পারি না। গ্লাস বন্ধ করে যাওয়ার চেষ্টা করি। তাও যেতে পারি না। এই হলো আমাদের অবস্থা।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কারণটা কী? আমরা কী অন্যায় করেছি? ইংল্যান্ডের একটি এক নম্বর কোম্পানি নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তাদের কাজ করতে দেয়া হয়নি। কেন দেয়া হয়নি তা আমরা জানি। ওই কোম্পানি রাস্তাঘাট তৈরি করতে তিনটা গাড়ি ব্যবহার করে। তিনটি গাড়ি মিলে চোখের নিমিষেই ১ কিলোমিটার রাস্তা করে ফেলে।’
তিনি বলেন, ‘এসব রাস্তার লাইফটাইম হচ্ছে ৫০ বছর। তৈরির প্রথম দশ বছর কিছুই করা লাগবে না। দশ বছর পর ৫ শতাংশ এগ্রি গ্যাস মেশাবে, এর ফলে আরও দশ বছর চলবে। এভাবে প্রতি ১০ বছর পর পর এগ্রি গ্যাস মেশালেই এর লাইফটাইম ৫০ বছর হবে।’
কামাল বলেন, ‘আমাদের দেশে এগ্রি গ্যাস জীবন ব্যবহার করতে দেখিনি। এগ্রি গ্যাস কী জিনিস সেটিও আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলো জানে কিনা সন্দেহ।’
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কার্যক্রমে গুণগত মান আনতে হলে অবশ্যই আপনাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রকৌশলী এ কে মোহাম্মদ ফজলুল করিম।
তিনি বলেন, ‘মাটির গঠন ও ওভারলোডের কারণে দেশের সড়কগুলো দ্রুত ভাঙে। ফলে সংস্কার করতে হয় বারবার। তবে সংস্কারের বিপরীতে সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে কম। গত অর্থবছরে চাহিদার মাত্র ১৯ শতাংশ অর্থ পেয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।’
ফজলুল করিম বলেন, ‘গত অর্থবছর সড়ক সংস্কার ও অবকাঠামো সংরক্ষণে সংস্থাটির দরকার ছিল ১১ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। অথচ বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ২ হাজার ২২৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর আগের ৯ অর্থবছরের কোনোবারই পর্যাপ্ত অর্থ মেলেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘৫ শতাংশ ওভারলোড হলে সড়কের স্থায়িত্ব কমে ১৮ শতাংশ আর ১০ শতাংশ ওভারলোডে রাস্তার আয়ুষ্কাল কমে ৩২ শতাংশ।’
Leave a Reply