রাজধানীর কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা হত্যা মামলায় দর্জি দোকানের কর্মচারী ওবায়দুল হককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর পাশাপাশি আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার জন্য একমাত্র আসামি ওবায়দুলকে কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

রায় ঘোষণার পর নিহত রিশার মা তানিয়া বেগম ও বাবা রমজান হোসেন সন্তোষ প্রকাশ করে আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা সাংবাদিকের বলেন, ‘বিচারের জন্য তিনটি বছর আদালতে ঘুরেছি। এ রায়ে আমরা সন্তষ্ট। হাইকোর্টে যেন এ আদেশ বহাল থাকে। আসামির ফাঁসি যেন দ্রুত কার্যকর হয়। সন্তান হারানো যে কী কষ্টের, যার যায় সেই বোঝে। এভাবে আর যেন কোন মায়ের কোল খালি না হয়।’ এছাড়া রায় ঘোষণার সময় রিশার ছোট ভাই-বোন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন ও তার সহপাঠীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বেলা ২টা ৫১ মিনিটে ওবায়দুলকে আদালতে হাজির করা হয়। বেলা ৩টায় বিচারক রায় পড়া শুরু করেন। ৩টা ২৬ মিনিটে আদালত ওবায়দুলের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রিশার বাবা-মা, সহপাঠী ও বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। রায় শুনে উপস্থিত হওয়া উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষার্থীরা আদালতের প্রাঙ্গণে আনন্দ প্রকাশ করে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট ওবায়দুলের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে ২৮ আগস্ট তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওইদিন রিশার মা তানিয়া বেগম বাদী হয়ে রমনা থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। রিশা মারা গেলে এটি হত্যা মামলায় পরিণত হয়। পুলিশ ওই বছরের ৩১ আগস্ট নীলফামারী থেকে গ্রেফতার করে আসামি ওবায়দুলকে। রিশাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয় সে। এরপর ঘটনার তদন্ত করে ওই বছরের ১৪ নভেম্বর রমনা থানার পুলিশ ওবায়দুলকে একমাত্র আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে। অভিযোগপত্রে রিশার চার সহপাঠীসহ ২৬ জনকে সাক্ষী করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, রিশার মা তানিয়া ওই হত্যাকাণ্ডের ৫-৬ মাস আগে রিশাকে নিয়ে বৈশাখী টেইলার্সে কাপড় সেলাই করাতে যান। এরপর দোকানের রসিদের কপি থেকে ফোন নম্বর নিয়ে দোকানের কর্মচারী ওবায়দুল ফোনে রিশাকে বিরক্ত করতে থাকে। রিশা প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওবায়দুল তাকে ছুরি মেরে হত্যা করে।

আসামি ওবায়দুল দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মীরাটঙ্গী গ্রামের আবদুস সামাদের ছেলে ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং মলে বৈশাখী টেইলার্স নামে একটি দর্জির দোকানের কর্মচারী ছিল সে।