কমিশন কেলেঙ্কারিতে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা অপসারণের পর এবার তদন্তের মুখে পড়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। উপাচার্য ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বিদায়ী দুই নেতা ও শিক্ষকদের একটি অংশের আনা কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে রবিবার উপাচার্যের বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা থেকে ভাগবাটোয়রার অভিযোগ তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাবি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ^বিদ্যালয় শাখা সূত্রে জানা গেছে, পত্রপত্রিকায় ওঠা অভিযোগ ছাড়াও শিক্ষকদের একটি পক্ষ মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। সে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কর্মকর্তারা এখনই পদক্ষেপের কথা কিছু বলতে না চাইলেও জানা গেছে, কর্মকর্তারা মনে করছেন কমিশন কেলেঙ্কারির ঘটনায় জাবি উপাচার্য দায় এড়াতে পারেন না। একজন উপাচার্যের কাছে ছাত্রনেতারা কীভাবে কমিশন দাবি করার সাহস পান- ছাত্রলীগের সঙ্গে উপাচার্য কীভাবে বৈঠক করেন- এ নিয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে।

এক কর্মকর্তা বলেছেন, উপাচার্যের বিরুদ্ধে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গোপনে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগ খুবই গুরুতর। তদন্ত চলছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ আল হ্সাান এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাননি। তবে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে। এছাড়া ইনিসিয়ালি অভিযোগ এসেছে, এখনই কিছু বলা যাবে না।

এদিকে জাবি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, উপাচার্যের বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা থেকে ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ তদন্তের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর নগরের ব্যানারে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মুরাদ চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যে দিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।

সমাবেশে বক্তারা বুধবারের মধ্যে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে দুর্নীতির তদন্তে বাধ্য করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সম্পাদক উপাচার্যের কাছে চাঁদা দাবি করেছিলেন এ কথা তিনি এতদিন কেন গোপন রেখেছিলেন তার ব্যাখ্যা চেয়ে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সদস্য রাকিবুল রনি বলেন, উপাচার্য কোন তদন্তের দিকে না গিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন। তিনি বলেছেন, কোন টাকা লেনদেন করেননি, আমরা তার এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। উপাচার্যকে তদন্ত করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে।

ছাত্রফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান বলেন, উপাচার্যের কাছে ছাত্রলীগ টাকা দাবি করেছে সেটা তিনি এতদিন কেন প্রকাশ করেননি। আমরা এর সঠিক উত্তর চাই।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার মুখপাত্র খান মুনতাসির আরমান বলেন, জাবির এই দুর্নীতির করাল গ্রাস দেশের সবাইকে ছুঁয়ে গেছে। দুর্নীতির খবর সবার সামনে আজ উন্মুক্ত। ছাত্রলীগ আপনার কাছে টাকা চেয়েছে আপনি এতদিন কেন এই খবর প্রকাশ করেননি। আপনাকে বহিরাগত কেউ টাকার জন্য চাপ দিল তবু আপনি কোন অভিযোগ করেননি। এতেই বোঝা যায়, আপনি নিজেও দুর্নীতিবাজ। আমরা এই দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত চাই।