জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এদের অধিকাংশ মুসলিম হলেও হিন্দু ও বৌদ্ধ রোহিঙ্গা শরনার্থীও রয়েছে। তবে অন্যদের বাদ দিয়ে শুধু হিন্দু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নিতে মিয়ানমার সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে সহযোগিতা চাইতে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শিরনা বার্গানারের শরণাপন্ন হয়েছে দেশটির সরকার। মিয়ানমার জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে উত্তর রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা হিন্দু পরিবারগুলো প্রত্যাবাসনে সহায়তা করতে বলেছে।

দেশটির আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অর্থনৈতিক বিভাগের মহাপরিচালক ইউ চ্যান আয়ে বলেন, বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতামন্ত্রী ইউ কিউ থিন রাজধানী নেপোডিতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শিরনা বার্গানারের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা হিন্দু পরিবারগুলো প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা চান।

ইউ চ্যান আয়ে আরো বলেন, জাতিসংঘের বিশেষ এ দূত হিন্দু পরিবারগুলোর স্বদেশ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে এর আগে বাংলাদেশকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি সফল হননি। এজন্য মিয়ানমার আবার হিন্দুদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সহায়তা করার জন্য তাকে অনুরোধ করেছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার থেকে পাঠানো প্রতিনিধিরা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী আট শতাধিক হিন্দু পরিবারের মধ্যে চারশ’রও বেশি পরিবারের সদস্যদের নাগরিকত্ব যাচাই করেছে। এসব পরিবার স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন করতে চেয়েছিল।তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ সরকার শুধু হিন্দু শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে চাচ্ছে না।

ইউ চ্যান আয়ে বলেন, জাতিসংঘের বিশেষ দূত বুধবার তিন দিনের সফরে মিয়ানমার পৌঁছেছেন। তিনি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) হুমকিসহ উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন থেকে কয়েক লাখ মুসলিম শরণার্থী প্রত্যাবাসনের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন।এ আলোচনায় বিশেষ করে হিন্দু শরণার্থীর ফেরার বিষয়টি উঠে আসে। মিয়ানমার সরকার স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন চায় এমন শনাক্ত হওয়া শরণার্থীদের গ্রহণ করবে। তবে দুইবার প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পরেও এটি ব্যর্থ হয়। কেবল জাতিসংঘের দূত নয় জাপান, চীন ও ভারতও হিন্দুদের প্রত্যাবাসনের জন্য চাপ দিচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাদের বিষয়ে কোনো চিন্তা করে না। হিন্দুদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য ফর্ম পূরণ করার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। ২০১৭ সালের নভেম্বরে উভয় দেশ স্বাক্ষরিত প্রত্যাবাসন চুক্তি বাংলাদেশ অনুসরণ করেনি বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

এদিকে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা হিন্দুদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন মিয়ানমারে বসবাসরত হিন্দু নেতা ইউ নি মউল। তিনি বলেন, হিন্দুরা তাদের প্রত্যাবাসনের অবস্থা নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছে। তারা ফিরে আসতে চায়, কারণ তারা বছরের পর বছর ধরে শিবিরে আছে। তবে হিন্দু রোহিঙ্গারা ফিরতে ভয় পাচ্ছে, কারণ এআরএসএ তাদের মিয়ানমারে ফিরে না আসার জন্য হুমকি দিচ্ছে। সূত্র- অর্থসূচক