বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজধানীর জুরাইনে রেল লাইনের দু’পাশের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে । গতকাল সোমবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত জুরাইন রেলগেট থেকে উত্তরে আদ-দ্বীন হাসপাতালের সীমানা পর্যন্ত (পূর্বের জুরাইন বাজার রেলওয়ে এলাকা) এ উচ্ছেদ অভিযান চলে। অভিযানে রেল লাইনের দু’পাশে থাকা কাচা-পাকা প্রায় সোয়া ৪শ’র মতো দোকান-পাট ও ঘর-বাড়ি উচ্ছেদ করে রেল কর্তৃপক্ষ।

রেল কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সকাল ১০টার দিকে রেল ওয়ের লোকজন ঘটনাস্থলে আসে। সোয়া ১০টা থেকে তার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এ অভিযান চলে। অভিযানকালে জুরাইন রেল লাইনের উভয় পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা একতলা, দোতলা ও টিনশেডসহ প্রায় সোয়া ৪শ’ ছোট-বড় স্থাপনা ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে প্রায় সোয়া ৪ একর জায়গা দখলমুক্ত করা হয়।
অভিযানে রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও প্রধান পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল দুপুরের পরে সরেজমিনে দেখা যায়, রেলওয়ের বুলডেজার একের পর এক স্থাপনা ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে। বেশিরভাগ স্থাপনা বাঁশ ও টিন দিয়ে তৈরি। তবে পাকা ও আধাপাকা ঘরও দেখা গেছে। দখলদারদের উচ্ছেদ হওয়া ঘর-বাড়ির ভাঙা অংশ তথা বাঁশ, কাঠসহ অন্যান্য আসবাব সরানোর কাজ করতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সরকারী কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতাসীন স্থানীয় প্রভাবশালীরা রেল লাইনের দুই পাশের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে এসব স্থাপনা তৈরি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। যার কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো। তিনি বলেন, উচ্ছেদের ফলে এখন ফাঁকা জায়গা দিয়ে মানুষ স্বাচ্ছন্দে হাওয়া-বাতাশ গ্রহন করতে পারবে। এছাড়া রেল লাইনের দু’পাশ দিয়ে নির্বিগ্নে চলাচল ছাড়াও দুর্ঘটনাও অনেক কমবে।

আকলিমা বেগম নামে এক গৃহবধূ বলেন, এর আগেও বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও আবারও এসব জায়গা দখল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, উচ্ছেদ করা ঘরগুলোর ভেতরে মাদক কেনাচেবা ছাড়াও নানা অপকর্ম হতো। এর প্রাভাবে এলাকার উঠতি কিশোর ও যুবকরা বখে যাচ্ছে। দখলদাররা অনেক শক্তিশালী হওয়ায় উচ্ছেদের পরে কয়েকদিন না যেতেই তারা আবারও নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করা শুরু করে। তিনি নিয়মিত অভিযান চালানো ছাড়াও দখলমুক্ত রাখতে উচ্ছেদ পরবর্তী তদারকির কাজে গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
অভিযানে অংশ নেওয়া বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় বহুবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। তবুও একটি অসাধু চক্র বারবার দখল করে দোকান-পাট ও স্থাপনা গড়ে তোলে। তিনি বলেন, এবারের উচ্ছেদ অভিযানকালে কোন বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। স্থানীয়রা উচ্ছেদের প্রশংসা করে সাধুবাদ জানিয়েছে। অভিযানে ৪টি দোতলা ভবন ছাড়াও একতলা, টিনশেডসহ অন্যান্য প্রায় সোয়া ৪শ’ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর ফলে রেলওয়ের বেদখল থাকা প্রায় সোয়া ৪ একর জায়গা দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া অভিযান চলাকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা (ঢাকা-৪) ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে রেল কর্তৃপক্ষকে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছেন বলে তিনি জানান।