পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বন্দি ও অপরাধী নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি (ক্যাট)। ইউএনসিএটি সনদ স্বাক্ষরের পর এই প্রথমবারের মতো স্বাধীন তদন্ত দল বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। রয়টার্স, ইয়াহু, বেনার নিউজ।

১৯৯৯ সালে নির্যাতনের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় সই করে বাংলাদেশ। প্যানেল সদস্য ফেলিস গায়ের বলেন, ‘গত ২০ বছরে বাংলাদেশ কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। সপ্তাহখানেক আগে তারা একটি প্রতিবেদন জমা দিলেও তা ছিলো কেবল আইন সম্পর্কিত। আমরা কোনো সন্তোষজনক সমাধানে আসতে পারিনি।’ এদিকে সরকার ওই কমিটির সুপারিশ নাকচ করে বলেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়।

বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জেনেভায় গত ৩০ ও ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত শুনানির পর শুক্রবার এই মতামত প্রকাশ করে নির্যাতন বিরোধী কমিটি। প্রকাশিত মতামতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্বিচারে গ্রেফতার, গোপনে আটকে রাখা এবং গুম, মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের ব্যাপারে তারা মারাত্মকভাবে শঙ্কিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে র‌্যাবকে তার কাজের জন্য জবাবদিহি করা যাচ্ছে না।’ কমিটি তাদের সুপারিশে র‌্যাবসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাজে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সুপ্রিমকোর্টের আওতায় একটি স্বাধীন প্রসিকিউশন বিভাগ গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন।

কমিটির ভাষায়, বিচার বিভাগের ওপর চাপের কারণে মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার যেসকল ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলো কাজ করতে পারছে না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সামান্যই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। উপরুন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার বিষয় নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সুশীল সমাজের সদস্য, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী এবং সাংবাদিকরা হয়রানি এবং সহিংসতার শিকার হয়েছেন। স্বাধীন মত প্রকাশের পথে প্রধান বাধা হিসাবে চিহ্নিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও তথ্য প্রযুক্তি আইনকে সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। একই সাথে সন্ত্রাস বিরোধী আইন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সতর্কতার সাথে সংশোধনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে।
ক্যাট আগামী বছরের ৯ আগস্টের মধ্যে বাংলাদেশকে তিনটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে বলেছে।

প্রথমত, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু রোধ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা এবং আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষগুলোর নীতিমালা অনুসরণ নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের অভিযোগ তদন্তের ব্যবস্থা করা ও আটকের স্থানগুলো স্বাধীন কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি সংগঠন বা এনজিও প্রতিনিধিদের পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত, জাতিসংঘ কমিটিকে সহায়তা করা এনজিওগুলোকে হয়রানি ও প্রতিশোধ থেকে সুরক্ষা দেওয়া।