৭ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের দুদক’র ডাবল মামলায় নোয়াখালী জেলা জজ আদালতের নাজির আলমগীর গ্রেফতার ৬ ঘণ্টা পর জামিন এখন আলোচনায়। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিং মামলায় নোয়াখালী জেলা জজ আদালতের নাজির মোহাম্মদ আলমগীরকে সোমবার সকালে মাইজদী শহরের পল্লবী সরকারি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন বাসার সামনে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৬ ঘণ্টা পর তার জামিন হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। পরে দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালতের কর্মচারীরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ঘিরে ধরেন। এক পর্যায়ে আসামিকে নিয়ে একটি কক্ষে আশ্রয় নেন দুদক কর্মকর্তারা।
এ সময় আদালতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় নোয়াখালীর সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদ গনমাধ্যমকে জানান, দুর্নীতির অভিযোগে মোহাম্মদ আলমগীরের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২৩শে নভেম্বর থেকে তদন্ত শুর করে দুদক। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ৭ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকা সত্ত্বেও নিজের দাপ্তরিক পরিচয় গোপন করে পেশা ব্যবসা দেখিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক মাইজদী কোর্ট শাখায় মেসার্স ঐশী ট্রেডার্স নামে চলতি হিসাব নং ০৫৭২১০১০০০০৭৬৮৮ এবং সিসি ঋণ হিসাব নং ১১০৫০০১১২২৯৭৩; ইউসিবিএল, মাইজদী কোর্ট শাখায় চলতি হিসাব নং ০৫৭২১০১০০০০৭৬৮৮; ডাচ্‌ বাংলা ব্যাংক মাইজদী কোর্ট শাখার চলতি হিসাব নং ২৫০১১০২২৬১; ওয়ান ব্যাংক মাইজদী কোর্ট শাখায় চলতি হিসাব নং ০৩৮০৩৪১৯২৫০০২ খোলেন। হিসাবগুলোতে ২০১০ সাল থেকে গত ৭ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ২৭ কোটি ৮২ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৬ টাকা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও তিনি বেশ কয়েকবার পাসপোর্টে ব্যবসায়ী সেজে বিদেশ ভ্রমণসহ নানা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব অপকর্মে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী জুডিশিয়াল নাজির নাজমুন নাহার, বোন আফরোজা আক্তার ও বন্ধু বিজন ভৌমিক। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন ও মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দুটিতে মো. আলমগীরকে প্রধান আসামি করা হয়।
দুর্নীতি দমন আইনে দায়েরকৃত মামলায় তার স্ত্রী, বোন ও বন্ধুকেও আসামি করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার দক্ষিণ লালপুর গ্রামের মো. নুরুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ আলমগীর এর আগে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রেকর্ড কিপার ছিলেন। তিনি সরকারি চাকরি থেকে মাতু ভূঞা করিম উল্যা উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, মাতু ভূঞা ভাষা শহীদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি, দাগনভূঞা বন্ধুর বন্ধন বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সহ নানা মসজিদ, মাদ্রাসায় দানবীর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। জেলা দুদকের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামি আলমগীর জেলা জজ, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের স্বাক্ষর ও স্মারক জাল করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে বেনামে দরখাস্ত দেয়ার অনুসন্ধান তদন্তে প্রমাণ মিলেছে।
দীর্ঘ তদন্তে ধৃত আসামি তার আত্মীয়স্বজন সহ নানা অপকর্মে সঙ্গে জড়িত বলে জানান। আদালতসহ তার উচ্চ পর্যায়ে সিন্ডিকেট এখন দুদকের নজরদারিতে রয়েছে। ২ মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হবে বলে দুদক জানায়।