জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ এপ্রিল ১, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 904 বার
ঢাকার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে দুইজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। রবিবার সন্ধ্যার পর ঝড় শুরু হলে ভবন থেকে ইট পড়ে এক চা দোকানি এবং গাছ ভেঙে এক নারী নিহত হয়েছেন। সংসদ ভবন এলাকা ও পুরানা পল্টন মোড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
শেরে বাংলা নগর থানা সূত্রে জানা যায়, সংসদ ভবন এলাকায় নিহত নারীর নাম মিলি ডি কস্তা (৬০)। তিনি মনিপুরি পাড়ায় থাকতেন। সন্ধ্যায় তিনি সংসদ ভবন এলাকার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার মরদেহ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
এদিকে পল্টন থানা থেকে বলা হয়, ঝড়ের সময় পুরানা পল্টন মোড়ে চায়ের গলিতে উঁচু ভবন থেকে একটি ইট নিচে পড়ে। এতে মো. হানিফ (৪৫) নামে এক চা দোকানি আহত হন। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে কোন ভবন থেকে ইটটি পড়েছে তা জানা যায়নি।
সন্ধ্যার হঠাৎ এই কালবৈশাখীর ঝড়ের কারণে অনেক পথচারী এবং অফিস ফেরত যাত্রীরা বিপাকের মধ্যে পড়ে যায়। বৃষ্টির মধ্যে অনেকে ভিজে একাকার হতেও দেখা গেছে। ঝড়ো বাতাসের কারণে যে যার মতো নিরাপদ আশ্রয়েও অবস্থান নেন। বৃষ্টিতে নিচু এলাকায় পানি জমতে দেখা গেছে। সড়কে স্থবির হয়ে পড়ে যানবাহন। তবে হঠাৎ এই কালবৈশাখীর সঙ্গে বৃষ্টিপাতের কারণে স্বস্তিও মিলেছে। ভ্যাপসা গরমের কারণে কিছুদিন ধরে নগরজীবনের অস্থিরতা চলছিল। তার সমাপ্তি হয় রবিবার সন্ধ্যার বৃষ্টিপাতের কারণে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে মৌসুমি লঘুচাপের প্রভাবে এই কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছে। এই মৌসুমে এই ঝড়বৃষ্টি স্বাভাবিক। পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশপাশের এলাকায় বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
সতর্কবার্তায় উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ- হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ধমকা বাতাসের সঙ্গে সৃষ্ট বজ্রপাতে দুই সহোদর শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উত্তর পতনউষার গ্রামের দিনমজুর জুনেদ মিয়ার ৬ বছরের শিশু কন্যা সাদিয়া আক্তার ও ৪ বছরের মুন্নী আক্তার বাড়ির উঠানে খেলা করছিল। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাত হলে সাদিয়া আক্তার ও ছোট বোন মুন্নী আক্তার গুরুতর আহত হয়। আহতাবস্থায় তাদের মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহত দুই বোন পতনঊষার মহিলা মাদ্রাসার শিশু শ্রেণীর ছাত্রী।
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার হাওড়ে ঘাস কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে রাব্বী মিয়া (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ইটনা সদরের পশ্চিমগ্রাম নন্দীহাটি গ্রামের কাদির মিয়ার ছেলে। রবিবার দুপুরে উপজেলা সদরের বলদারঘাটে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, সকালে পাশের বলদার হাওড়ে ঘাস কাটতে যায় রাব্বী। পরে সেখানে দুপুরের দিকে দমকা বাতাসের সঙ্গে আকস্মিক বজ্রপাতের ঘটনা হলে ঘটনাস্থলেই রাব্বীর মৃত্যু হয়।
নেত্রকোনার বাহাদুরপুর গ্রামে বজ্রপাতে এক কৃষক মারা গেছেন। নিহত কৃষকের নাম আছর উদ্দিন (৬৮)। রবিবার বিকেলে কৃষকের বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। বিকেল চারটার দিকে আছরউদ্দিন বাড়ির সামনে মগড়া নদীর কাছের ক্ষেতে কৃষিকাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির সঙ্গে আকস্মিক বজ্রপাতে তার শরীর ঝলসে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
Leave a Reply