রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কোনো দুর্ঘটনা নয়। বরং এটি গাফিলতির মাধ্যমে একটি হত্যাকাণ্ড। আর এর জন্য যারাই দায়ী, তারা যত শক্তিশালী আর প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবার সকালে এফ আর টাওয়ারের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা জানান গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

বনানীর ফারুক রূপায়ণ (এফ আর) টাওয়ারে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে একটার দিকে আগুন লাগে। সন্ধ্যার দিকে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। এর পর ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে প্রবেশ করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ সময় একের পর এক মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার সকালেই পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৩ জন। নিহতের ২৪ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, ক্ষমতা, পদপদবীতে যে যত প্রভাবশালীই হোন না কেন শাস্তি এড়াতে পারবেন না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে।

মন্ত্রী বলেন, এফ আর টাওয়ার কী করে ১৮ তলার অনুমোদন নিয়ে ২৩ তলা হয়ে গেল, সে সম্পর্কিত কাগজপত্র রাজউকের রেকর্ডবুকে পাওয়া যায়নি।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে রাজউক ১৮ তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন ছিল। ২০০৫ সালে একটি নথিতে দেখা যায়, ভবনটি ২৩ তলা। এই ভবনটি কীভাবে ২৩ তলা হলো তার সমর্থনে কোনো কাগজপত্র রাজউকের রেকর্ডবুকে নেই। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ত্রুটির জন্য যে বা যারাই অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান, মালিক বা সংশ্লিষ্ট লোকজন সবাইকে শাস্তি দেওয়া হবে।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ্যে প্রকাশ করা হবে। আগের তদন্ত প্রতিবেদনে কি সুপারিশ ছিল আর সেগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল তারা কেন সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি সেগুলোও আমরা খতিয়ে দেখবো এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্ত্রী বলেন, এ ভবনটির (এফ আর টাওয়ার) আশপাশে যেসব বহুতল ভবন আছে সেগুলোর ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অনুমোদিত অংশের বাইরে ভবন ভাঙার সুযোগ থাকলে ভেঙে ফেলা হবে। এ ঘটনার জন্য যারাই দায়ী, প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিট ছাড়াও সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর সদস্যদের ৭ ঘণ্টা চেষ্টার পর ওই ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

সন্ধ্যায় একাংশের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিসকর্মী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে প্রবেশ করেন। সেখানে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে নিচে নামিয়ে আনেন।