জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ মার্চ ১৬, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 582 বার
কখনো রাস্তায় গাড়িতে কিংবা চলতি পথে আবার কখনো না বাড়িতে উপস্থিত হয়ে সৌদি আরবের কিছু রিয়াল নিয়ে জানতে চাইত এগুলো কোথাকার টাকা, আরো বেশ কিছু বান্ডিল তার কাছে আছে, ইজতেমার মাঠে দুই বান্ডেল পেয়েছে, তারা জানতে চাইল বিদেশী মুদ্রা ভাঙ্গানো যাবে কোথায়। কেউ যদি কমদামে রিয়াল কিনতে চাইত তাহলে দুই চারটি আসল নোট আর জাল নোট দিয়ে ভেতরে সাদা কাগজের বান্ডেল হাতে ধরিয়ে দ্রুত কেটে পড়ত প্রতারক চক্রটি।
চক্রটির সদস্যরা পেশায় রং ব্যবসায়ী, কখনো বা তারা রিকশা চালক সেজে সৌদি রিয়ালের বিষয়টি যাত্রীকে বলত, তাদের মূল লক্ষ্য থাকত বোকা সেজে সাধারণ মানুষদের প্রতারণায় ফেলানো।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ভাটারার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক চক্রের ৭ সদস্যকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১)।
আটকরা হলেন- আবু শেখ (৩৮), শাহিন মাতব্বর (৩৭), মহসিন মিয়া (৪৫), আবুল বাশার (৪০), কামরুল শেখ (৩৫), ইশারত মোল্লা (২৭) ও আব্দুর রহমান মোল্লা (৪০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০০ রিয়েল, ৩ হাজার ৮২২ টাকা ও ১০ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।
তিনি বলেন, চক্রটি বিভিন্নভাবে জনসাধারনকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতো। প্রতারকদের সবাই পেশায় রং মিস্ত্রী, সেই সুবাদে সহযেই মানুষের বাসায় প্রবেশ করতে পারতো। কারো বাসায় ঢুকে বয়স্ক ব্যক্তিদের টার্গেট করতো। তারা রিয়াল দেখিয়ে কমমূল্যে বিক্রি করার কথা বলে প্রলোভন দেখাতো। আর ওই ব্যক্তি রাজি হলেই টাকার বিনিময়ে উপরে কয়েকটি রিয়াল নোট ভেতরে কাগজ দিয়ে বানানো বান্ডেল দিয়ে কেটে পড়তো।
র্যাব জানায়, গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় যানজটে আটকে থাকা প্রাইভেটকারের যাত্রীদের টার্গেট করতো। তারা গাড়ির বাইরে থেকে রিয়ালের নোট দেখাতো, এবং অনেক নোট আছে বলে জানাতো। কখনো হজ্জ ক্যম্পকে টার্গেট করে চলতো তাদের প্রতারণা। সেখানে গ্রাম থেকে আসা লোকদের ফাঁদে ফেলে এ পর্যন্ত লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম
সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চক্রটির বেশ কয়েকজন লোক থাকত। তারা রিয়াল কিনতে আগ্রহী বলে জানাত।ওই সময় তারা টাগের্ট ব্যক্তিকে সহজেই খুঁজে পেত। টার্গেট করা ব্যক্তি কেনার ফাঁদে পা দিলে তারা টাকার বিনিময়ে রিয়ালভর্তি ব্যাগ দিয়ে পুলিশ দেখে ফেলবে বলে দ্রুত কেটে পড়তো। কিছু বুঝে উঠার আগেই কাগজ বা কাপড়-দিয়ে মোড়ানো ভুয়া বান্ডেলে প্রতারণার শিকার হতো টার্গেট ব্যক্তি।
কখনো কখনো নিজেরা বোকা সেজে টার্গেট ব্যক্তিকে বোকা বানাতো। রিয়ালের নোট দেখিয়ে কিছু বুঝেনা এমন ভাব নিতো। আর সেই সুযোগে টার্গেট ব্যক্তি রিয়েল কেনার জন্য রাজি হলেই প্রতারণার শিকার হতো। চক্রটি রিয়াল হস্তান্তর করার জন্য বিভিন্ন শপিংমল কিংবা জনবহুল জায়গা ঠিক করতো, যেন টাকা নিয়ে দ্রুত কেটে পড়তে পারে।
র্যাব-১ অধিনায়ক আরো বলেন, আবু শেখ এ চক্রের মূল হোতা। তার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে সাত জনের এই চক্রটি অভিনব পন্থায় প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। এমন আরো দুই-একটি চক্র রাজধানীতে সক্রিয় থাকতে পারে, তাদের বিষয়ে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply