ঘুরে আসুন নেত্রকোনা
গারো পাহাড়ের পাদদেশে কংশ সোমেশ্বরী আর মগড়া পাড়ের সূনেত্র নীলিমায় আঁকা নেত্রকোনা। জেলাটি ইতিহাসের অনেক ঘটনার নিরব সাক্ষী। টংক প্রথা বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিধন্য। এখানে শায়িত আছেন ইসলাম প্রচারের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হযরত শাহ সুলতান কমরুদ্দিন রুমীর (রঃ) মাজার। এখানে রয়েছে হাওর বাঁওড়। রয়েছে গারো পাহাড়ের পাদদেশে আদিবাসি অধ্যুষিত দুর্গাপুর আর কলমাকান্দা উপজেলা। এ জেলার অন্যতম ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন কমরেড মনি সিংহ, সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাব উদ্দিন আহমেদ, বরেণ্য সাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, কবি নির্মলেন্দু গুণ, কবি হেলাল হাফিজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুজিবুর রহমান খাঁ, প্রখ্যাত সাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরী এবং রবীন্দ্র বিশ্বভারতীর অধ্যক্ষ শৈলজানন্দ মজুমদার। পর্যটন জেলা হিসাবে এই জেলা এখানো সেভাবে গড়ে না উঠলেও দেখা বা বেড়ানোর মত রয়েছে অনেক স্থান।
যা দেখবেন: দুর্গাপুরে প্রবেশ পথেই পাবেন বিরিশিরির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি। সেখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা বিশেষ করে গারো এবং হাজংরা তাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখার জন্য তাদের সংস্কৃতি চর্চা করে থাকে। সেখানে তারা প্রতিদিন তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। প্রতিবছর সেখানে অনুষ্ঠিত হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বার্ষিক অনুষ্ঠান। দুর্গাপুরে গেলেই দেখতে পাবেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণীরা কাজ করছে মাঠে। যাচ্ছে স্কুল কলেজে। তারাও আর এখন পিছিয়ে নেই। তাদের সাথে একাডেমিতে বসে তাদের সংস্কৃতি নিয়ে আপনি কথা বলতে পারবেন। জানতে পারবেন তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য।
দুর্গাপুরে রয়েছে রাণিকংয়ে খৃষ্টানদের শতাব্দী প্রাচীন উপাসনালয়। রয়েছে বিজয়পুরের সাদামাটি। ভারত সীমান্তের কাছাকাছি মনোরম পাহাড়ী দৃশ্যপট। স্রোতস্বিনী সোমেশ্বরী নদী। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কমরেড মনিসিংহের রাজবাড়ি, যেটি এখন মহিলা কলেজ। দেখতে পাবেন টংক আন্দোলনের সুতিকাগার রাশিমনির স্মৃতিস্তম্ভ। কেন্দুয়ার সাজিউড়ায় রয়েছে অবিভক্ত ভারতের অর্থমন্ত্রী নলিনী রঞ্জন সরকারের বাসভবন। কেন্দুয়া রোয়াইলবাড়িতে রয়েছে মোগল আমলের নির্মিত মসজিদ আর পরিখা। খালিয়াজুরী আর মদনে রয়েছে বিশাল বিশাল হাওর। ট্রলার ভাড়া করে সেখানে বেড়ানো যায়। তবে বর্ষার সময় ট্রলারে ভ্রমণ করা যায় না। কারণ হাওরের উত্তাল ঢেউ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
যেভাবে যাবেন: দুর্গাপুর আর কলমাকান্দায় যাবার বিশেষ সুবিধা হলো ঢাকার মহাখালি থেকে সরাসরি বাসে যাতায়াত। সকাল ৭টা থেকে বাস ছাড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চলে বাস। দুর্গাপুর যেতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার। মহাখালি থেকে শাহ সুলতান বাস সার্ভিস, নেত্র পরিবহন ছাড়াও কয়েকটি বাস সার্ভিস রয়েছে। এছাড়া বিআরটিসি বাস ছাড়ে গুলিস্থান থেকে। বাস ভাড়া ২৫০ টাকা। তবে যাতায়াতের জন্য কোন এসি বাস নেই। মাইক্রোবাসেও পরিবার নিয়ে যাওয়া যায়। ভাড়া ৫ হাজার টাকা। ঢাকা থেকে ভেঙ্গে ভেঙ্গেও যাওয়া যায়। মহাখালি থেকে ময়মনসিংহ,পরে ময়মনসিংহ থেকে ব্রহ্মপুত্র সেতুর পারে দুর্গাপুরের বাস। আবার ঢাকা থেকে ট্রেনেও যাওয়া যায়। প্রথমে ময়মনসিংহ,পরে ময়মনসিংহ থেকে জারিয়া-ঝাঞ্জাইল রেল ষ্টেশন। সেখান থেকে বাসে বা টেম্পোতে দুর্গাপুর। দুর্গাপুরে রিকশায়ও চলাচল করতে পারবেন। কেন্দুয়া ও ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে/মাইক্রোবাসে যাওয়া আসা করা যায়। বিরিশিরি হতে রানীখং ভাড়া করা মোটর সাইকেলে অথবা নৌকাযোগে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে মদনের মহাখালি থেকে এবং কমলাপুর থেকে বাসে যাতায়াত করা যায়। বাস ভাড়া ২৫০ টাকা।
কোথায় থাকবেন: বিরিশিরি উথরাইলে রয়েছে উন্নতমানের দুটি রেষ্ট হাউজ। এদুটো পরিচালনা করে খৃষ্টান মিশনারীরা। একটি ওয়াইএমসিএ এবং অপরটি ওয়াই ডাব্লিও সিএ। ওয়াইএমসিএর ভাড়া ৪ শত টাকা এবং ওয়াই ডাব্লিও সিএর ভাড়া (এসি) ৭০০ টাকা। ওয়াইএমসিএর মোবাইল নাম্বারঃ ০১৭৪৩৩০৬২৩০ এবং ওয়াই ডাব্লিও সিএর মোবাইল নাম্বার ০১৭২১৩৯৪৩২০। বিরিশিরি কালচারাল একাডেমিতেও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। একাডেমির মোবাইল নাম্বারঃ ০১৭৪৩০৭৫৬৪৭। নেত্রকোনা শহরে মগড়া সেতুর কাছে সৌরভ হোটেলে থাকার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া রয়েছে ষ্টেশন রোডে চন্দন গেষ্ট হাউজ। হোটেল গোল্ডের স্টার। এছাড়া শহরে রয়েছে বেশ কয়েকটি মাঝারি ধরনের হোটেল। সেখান থেকেও মোটর সাইকলে বা মাইক্রোবাসে দুর্গাপুর কলমাকান্দা এবং কেন্দুয়ায় যাতায়াত করা যায়। মাইক্রোবাস তো আছেই।
যা কিনতে পারেন: নেত্রকোনার বিখ্যাত গয়ানাথের বালিশ মিষ্টি। ছোট আকার থেকে বিশাল ঢাউস সাইজের এই বালিশ মিষ্টি আপনি নিয়ে যেতে পারবেন। তবে এটি কেজিতে নয়। পিস হিসাবে বিক্রি হয়। ১০ টাকা থেকে ২ শত টাকা পর্যন্ত এতে পিস মিষ্টির দাম। মিষ্টির সাথে দেয়া হবে ক্ষির। নেত্রকোনা শহরের বারহাট্টা রোডে মিষ্টির দোকান। এছাড়া রয়েছে নেত্রকোনার বারহাট্টার ছানার রসগোল্লা। এক এক পিস ২০ টাকা। দুর্গাপুর থেকে নিতে পারবেন আপনার প্রিয়জনদের জন্য দকবান্দা, দকশাড়ি বা আদিবাসীদের পোশাক। একপিস দকমান্দা ড্রেসের দাম ৫ শত টাকা থেকে ১২৫০ টাকা। ওড়নার দাম ৩২০ টাকা থেকে ৮শত টাকা।
—-ইন্টানেট থেকে।