সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্মরণে শোক প্রস্তাব উত্থাপনকালে সংসদে অশ্রুসজল পরিবেশের অবতারণা ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের শুরুতে সৈয়দ আশরাফকে ছোট ভাই হিসেবে সম্বোধন করেন।

একইসঙ্গে তার চলে যাওয়ায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে সততা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার শূন্যতা সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসময় তিনি অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন।

বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে এ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

শোক প্রস্তাবে মৃত্যুবরণকারী সকলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।

এসময় সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন: সৈয়দ আশরাফের বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলাম একটা সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সৈয়দ আশরাফ যেমন দেরাদুনে ট্রেনিং নেয়, আমার ছোট ভাই কামালও দেরাদুনের ট্রেনিং নিয়েছিল। তারা একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। আশরাফ যখন পড়াশোনা করতে বিদেশে চলে গিয়েছিল তখনই ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরের ঘটনা ঘটে। সেসময় আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম।

এসময় শেখ হাসিনা বলেন: ১৯৮০ সালের দিকে আমি লন্ডনে যাই। সেখানে আশরাফকে নিয়ে আমরা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ গড়ে তুলতে কাজ করি। আশরাফ সবসময় আমাদের সঙ্গে কাজ করেছে। সবসময় আমাকে বড় বোনের মতোই জানতো। ১৫ আগস্ট এবং ৩ নভেম্বরে যারা আপনজন হারিয়েছি প্রত্যেকেরই অনেক কষ্টের ভেতর দিন যাপন করতে হয়েছে। আশরাফ ছিল অত্যন্ত সৎ।

সৈয়দ আশরাফের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন: ৯৬ সালে আমি আশরাফকে বললাম তুমি দেশে আসো, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করো। সরকার গঠন করলে তাকে প্রথম আমি প্রতিমন্ত্রী করি। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে আমি তাকে স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমরা তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছি। প্রতিটা ক্ষেত্রে সে খুবই সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে।

ছাত্রলীগ থেকে সৈয়দ আশরাফের রাজনীতি শুরু জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন: সে যখন ময়মনসিংহে ছাত্রলীগ করত, আমাদের সঙ্গে একসঙ্গে ছাত্রলীগ করত। আওয়ামী লীগের তাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। দুই দুইবার সে সাধারণ সম্পাদক ছিলো। পরবর্তীতে সে প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছিল। তার জ্ঞান প্রজ্ঞা অস্বাভাবিক ছিল। সবসময় পড়াশোনার মধ্যেই থাকতো। সবথেকে দুঃসময় যখন গেছে, ২০০৭ সালে ইমার্জেন্সি দিয়ে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়, আমাকে দেশে আসতে বাধা দেয়া হয়েছিল অনেকটা জোর করে আমি দেশে ফিরে আসি। তখন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে সে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল।

তিনি বলেন: গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তার বড় ভূমিকা রয়েছে। আমি আসলে ভাবতে পারিনি আশরাফ এত তাড়াতাড়ি আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাবে। অনেক স্মৃতি মনে পড়ে…। এমনও দিন গেছে হয়তো আশরাফের কাছে খাবারও পয়সা ছিল না। একদিন টেলিফোন করল বলল আপা অনেকদিন হয়ে গেল বাড়ির কেউ খাবার খায় না। আমি বললাম চলে আসো। এত সহজ সরল ছেলে যে বললো আসবো যে ট্রেনের ভাড়াটাও তো নেই! আমি বলতাম, তুমি যেকোনো ভাবে নিয়ে আসো আমি ব্যবস্থা করব। একটা বড় বোনের কাছে যে আবদার করা সেভাবেই সে আবদার করেছে। আমার ভাইদের হারিয়ে যাদেরকে খুব কাছে পেয়েছিলাম তাদের মধ্যে আশরাফ একজন।