ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লিফটে ওঠাকে কেন্দ্র করে সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রুহুল আমিনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে।
গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালের (ঢামেক) নতুন ভবনে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত রুহল আমিনকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার পায়ে বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়েছে বলে রুহুল আমিনের এক বন্ধু জানিয়েছেন। ঘটনার সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর রুহুল আমিনের আত্মীয়ের লাশ অনেকক্ষণ আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন সিনিয়র নেতা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও একটা হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তিনি। তার ওপর এরকম হামলা অবশ্যই নিন্দনীয় ও ন্যক্কারজনক। আমরা উনাকে বলেছি লিখিত অভিযোগ দিতে। আমরা তদন্ত করে এটার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেব। রাতের ঘটনা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জানানোর কথা জানিয়ে রাব্বানী বলেন, আপা (প্রধানমন্ত্রী) দেশে আসলে এ বিষয়টা আমরা উনার নলেজে দেব। চকবাজার থানার ওসি শামীমুর রশীদ তালুকদার জানান , এ ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয়নি। কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। কাউকে আটক করা হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রুহুল আমিনের বড় ভাই ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রহিমের শাশুড়ি বুধবার ঢাকা মেডিকেলে মারা যান। তার লাশ নিতে রাতে হাসপাতালে যান রুহুল আমিন ও তার ভাই-ভাবিসহ অন্যান্যরা। রাত ১২টার দিকে তারা লিফটে ওঠার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের বড়ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে সঞ্জিতের কয়েকজন অনুসারী ওই লিফটে ওঠেন। লোক বেশি হয়ে যাওয়ায় রুহুল কয়েকজনকে নেমে যেতে অনুরোধ জানান। এ নিয়ে সঞ্জিতের ভাইয়ের সঙ্গে রুহুলের কথা কাটাকাটি হয়। আধা ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১২টার দিকে সঞ্জিতের অনুসারী হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন হলের শতাধিক ক্যাডার ঢাকা মেডিকেলের নতুন ভবনের অষ্টম তলায় উঠে রুহুল আমিনকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। তখন সঞ্জিতও সেখানে ছিলেন এবং তিনি রুহুল আমিনকে মারধর করার নির্দেশ দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের নির্দেশে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মারতে মারতে রুহুলকে অষ্টম তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে আসেন। এই পরিস্থিতির মধ্যে হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঢাকা মেডিকেলের নতুন ভবনের দোতলায় গিয়ে দেখেন, রুহুল আমিন লিফটের সামনে বসে কাঁদছেন। তার শার্ট ছেঁড়া, শরীর ও মুখে কালসিটে দাগ।
ছাত্রলীগের সোহাগ-নাজমুল কমিটির সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা রুহুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, আমি আমার পরিচয় দিয়েছি। বলেছি লাশ নিতে এসেছি। তবুও ওরা আমাকে যেভাবে শিবির বলে মারধর করেছে এতবছর ছাত্রলীগ করে যদি এই লজ্জা পেতে হয় তাহলে কার জন্য ছাত্রলীগ করলাম, কিসের জন্য ছাত্রলীগ করলাম!
তিনি আরো বলেন, ওরা আমাকে আমার ভাইয়ের শাশুড়ির লাশ নিতে দেয়নি। অনেকক্ষণ লাশ আটকে রেখেছিলো।
রাত সোয় ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল থেকে চিকিৎসা নিয়ে যাওয়ার সময় রুহুল সাংবাদিকদের বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এর বিচার না হবে ততক্ষণ আমি খাব না। কেউ যদি আমাকে জোর করে তবে আমি আত্মহত্যা করব। এই কমিটির দ্বারা আমি যে অপমানের শিকার হয়েছি তা হাজার বার জন্ম নিলেও ভুলব না। গতকাল ভোরে শহীদ মিনারের সামনে এসে রুহুল আমিন বমি করতে শুরু করলে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। মাথায় আঘাত পাওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তার সিটি স্ক্যান করা হয়। এক পর্যায়ে তাকে ধানমন্ডির গ্রিন রোডের একটি বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। তিনি এখনও ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভাই ঢাকা মেডিকেলে গিয়েছিলেন আমার প্রেগনেন্ট ভাবিকে নিয়ে। লিফটে ওঠার সময় রুহুল ভাই আমার ভাইয়ের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে৷ আমার ভাইকে বলে, আমি যদি হাত-পা ভেঙ্গে ফালাই তাইলে কি করবি? আমার ভাই তখন বলছে, আমি সঞ্জিতের বড় ভাই। তখন রুহুল ভাই বলছে, ওরে ক আসতে। পরে পোলাপানের সাথে নাকি ঝামেলা হইছে। তখন আমি নিজে গিয়ে ঝামেলা মিটায়ে দিয়ে এসেছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কারা কারা এসেছিল জানতে চাইলে সঞ্জিত বলেন, ওরা বলছে-ভাই আমরা আলিয়ার (ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা)। ওইখানে একটু ঝামেলা হইছে। রহুল ভাইয়ের এখানে তো কোনো ঝামেলা হওয়ার কথা না। আমি শুধু তারে জিজ্ঞেস করছি, ভাই আপনি আমার ভাইয়ের সাথে খারাপ বিহ্যাভ কেনো করছেন? পরে সে আমার সাথেও খারাপ বিহ্যাভ করছে। যেহেতু পেশেন্ট মারা গেছে, তাই আমি পোলাপান নিয়া চলে আসছি।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সঞ্জিতের অনুসারীরা হাসপাতালে থেকে মারামারি করে ফেরার পথে পথচারীদেরও মারধর করে। এর মধ্যে ঢাকা কলেজের ম্যানেজমেন্টের ছাত্র মমিনুর রহমান রকি এবং ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কাজী শাওন ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে আসেন চিকিৎসা নিতে।
তারা দু’জন গতকাল জানান, আমরা ওই এলাকায় পেনাং হোটেলে খাইতে আসছিলাম। কি ঝামেলা হইছে জানি না। হঠাৎ দেখি কয়েকজন আমাদের এসে মারা শুরু করল। অনেকক্ষণ মারার পর শিবির বলে আমাদের পুলিশের হাতে তুলে দিল। অথচ আমি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য। ওরা আমাদের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে গেল।