নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় একটি প্রতিবাদ সমাবেশকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণের ওপর হামলা হয়। সভামঞ্চ ভাঙচুর ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। এতে এমপিসহ আহত হন ৩০ জন।
জানা যায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ অপহরণ মামলার এক আসামিকে আটক করলে স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুসারী ও বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ্যডভোকেট আকতারুজ্জামান আনসারী বিষয়টি মিমাংসা করে তাকে ছাড়িয়ে নিতে চান। এ সময় পুলিশ ওই আসামিকে না ছাড়ায় আনসারীসহ কিছু লোকজন চৌমুহনী-ফেনী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবোরোধ করে। ওই সড়ক দিয়ে সে সময়ে নোয়াখালীর উন্নয়ন কনসার্টে গান গাইতে আসছিলেন সংসদ সদস্য মমতাজ। তিনি আটকা পড়েছেন খবর পেয়ে প্রতিপক্ষ চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র সমর্থকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আনসারীকে বেদম মারধর করে অবরোধ তুলে দেয়। আ্যডভোকেট আনসারীর ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে চৌমুহনী পাবলিক হল চত্বরে বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশের আয়োজন করে।
বিকেল ৩টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মান্নান বাবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হলে সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরনের সমর্থকরা আসার আগেই চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র আখতার হোসেন ফয়সালের সমর্থকরা জায়গা দখল করে নেয়। পরে সংসদ সদস্যের সমর্থনে একটি মিছিল সমাবেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সালের উপস্থিতিতে তার সমর্থকদের সঙ্গে সংসদ সদস্য সমর্থকদের কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত কর্মীরা চেয়ার ভাঙচুর করে। শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ। বিকেলে সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে। হামলায় উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। উভয় গ্রুপ ইট-পাটকেল, লাঠিসোটা ব্যবহার করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে পিংকু (৩০), রাসেল (২৪), সবুজ (২৩) সুমন (৩০), বজদাস (৩৮) ফয়েজ আহমেদ (৩২), বাকের (৩৫) ও ১২ পুলিশসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ১ জনসহ ৪ জনকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে এবং অন্যান্যদের বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, সংঘর্ষ চলকালে চৌমুহনী বাজারে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ে ব্যবসায়ীরা দোকারপাট বন্ধ করে দেন। চৌমুহনী-ফেনী, লক্ষ্মীপুর সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর থেকে চৌমুহনীতে থমথমে অবস্থা বিরাজ বিরাজ করছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সৈকত শাহীন জানান,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৬২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং পাঁচ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ সময় দুই পক্ষের ছোড়া ইটের আঘাতে বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান শেখ ও বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ পদির্শক (তদন্ত) নুরে আলমসহ অন্তত ১৫ পুলিশ সদস্য আহত হন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তাদেরকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলেও তিনি জানান।