জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ আগস্ট ১৬, ২০২০ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 255 বার
আজ পহেলা ভাদ্র। প্রিয় ঋতু শরতের প্রথম দিন। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে প্রকৃতিতে এসেছে শরৎকাল। বর্ষার অঝোর বর্ষণ, বিজলি আর বজ্রপাতের গগণবিদারী নাদ, পথঘাট পিচ্ছিল, কর্দমাক্ত, ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহ ছেড়ে প্রকৃতিতে শরৎ আসে শান্ত, স্নিগ্ধ আর কোমলতার রূপ নিয়ে, যেখানে নেই কোনো মলিনতা, আছে নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ্বাস।
‘আজি ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরির খেলা রে ভাই লুকোচুরির খেলা/ নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা।’
ভাদ্র মনকে উদ্বেলিত করে। প্রকৃতির সবুজ ছড়িয়ে পড়ে মাঠে-ঘাটে। এ স্নিগ্ধরূপ তারুণ্যকে উচ্ছ্বসিত আনন্দে ভাসার উদ্বেগ সৃষ্টি করে। প্রকৃতি তার ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নিতে চায় সকল মনকে। শরত্ সেই ভালোবাসার মনে দোলা দিয়ে যায়।
তাই মহাকবি কালিদাস শরতের বন্দনা করেছেন: ‘প্রিয়তম আমার! ঐ চেয়ে দেখো, নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরত্কাল সমাগত।’ প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ শরতের চরিত্রের সঙ্গে বর্ণনা করেছেন প্রিয়তমাকে। প্রেম-দ্রোহের কবি নজরুলকেও আলোড়িত করেছিল শরতের প্রকৃতি। বিশেষ করে, শরতের শিউলি তাকে মুগ্ধ করেছিল। ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি-বিছানো পথে।/ এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ-রথে…।’
শরতের কাশফুলে মুগ্ধ হয় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কাশফুল নদীতীরে বনের প্রান্তে অপরূপ শোভা ছড়ায়। গাছে গাছে শিউলির মন ভোলানো সুবাসে প্রকৃতি হয়ে উঠে মায়াময়। শরৎকালে কখনো কখনো বর্ষণ হয়, তবে বর্ষার মতো অবিরাম নয়। বরং শরতের বৃষ্টি মনে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। চারপাশের শুভ্রতার মাঝে বৃষ্টির ফোঁটা যেন আনন্দ-বারি। বৃষ্টি শেষে আবারো রোদ। দিগন্ত জুড়ে সাতরঙা হাসি দিয়ে ফুটে ওঠে রংধনু। কবিগুরু বলেন, ‘আজি কি তোমার মধুর মুরতি হেরিনু শারদ প্রভাতে, হে মাতা বঙ্গ শ্যামল অঙ্গ ঝলিছে অমল শোভাতে।’ শরৎকালে মানব মন উৎসবের নেশায় মেতে উঠে। মাঠে মাঠে সবুজ ধানের ওপর সোনালি আলোর ঝলমলানি কৃষকের মনে জাগায় আসন্ন নবান্নের প্রতীক্ষা আলোক-শিশিরে-কুসুমে-ধান্যে ভরা বাংলার প্রকৃতির জন্য।
কবি জীবনানন্দ দাশ ‘এখানে আকাশ নীল’ কবিতায় লিখেছিলেন ‘এখানে আকাশ নীল- নীলাভ আকাশ জুড়ে সজিনার ফুল ফুটে থাকে হিম শাদা- রং তার আশ্বিনের আলোর মতন।’ প্রকৃতির এই রূপসুধা আহরণ করতে শত দুঃখ কষ্টের ভেতরে ও মানুষ তাকায় আকাশপানে। ভোরের শিশিরভেজা দুর্বা মাড়িয়ে, সকালের সোনাঝরা রোদ আর আকাশে শাদা মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে হয়তোবা মানবমন হারিয়ে যায় শরতের প্রাকৃতিক সুষমার রাজ্যে।
শরত্কালের মধ্যেই যেন বাংলাদেশের হূদয়ের স্পর্শ পাওয়া যায়। নদীর তীরে তীরে কাশফুলের শুভ্রতার প্লাবন, মাঠে মাঠে সবুজের মেলা; এত নীল আর এত সাদার একত্র সমাবেশ কেবল শরতেই দেখা মেলে এই রূপসী বাংলায়।
শরতে শুধু প্রকৃতি নয়, মনও বদলে যায়। পরিবর্তিত হয়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়: শরতে আজ কোন অতিথি এল প্রাণের দ্বারে।/আনন্দগান গা রে হৃদয়, আনন্দগান গা রে…। নজরুল শরতে হারানো প্রিয়াকে অনুভব করেছেন। লিখেছেন: শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ-রাতের বুকে ঐ/এমন রাতে একলা জাগি সাথে জাগার সাথী কই…। একইরকম বিরহ আক্রান্ত হয়ে কবি লিখেছেন: দূর প্রবাসে প্রাণ কাঁদে আজ শরতের ভোর হাওয়ায়।/শিশির-ভেজা শিউলি ফুলের গন্ধে কেন কান্না পায়…। প্রায় অভিন্ন অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়ে কবিগুরু লিখেছেন: আজি শরতাপনে প্রভাতস্বপনে কী জানি পরাণ কী যে চায়।/ওই শেফালির শাখে কী বলিয়া ডাকে বিহগ বিহগী কী যে গায় গো…।
Leave a Reply