ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ১২ জন বিদেশীকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সময় তাদের সহযোগী এক বাংলাদেশীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার জানিয়েছেন, প্রায় দুই মাস ধরে এই প্রতারকরা ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছে। এভাবে তারা পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি।

যেভাবে প্রতারণা করে ফেসবুকের বিদেশী বন্ধুরা

সিআইডি জানিয়েছে, প্রথমে এই ব্যক্তিরা বিপরীত লিঙ্গের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুত্ব করে।

বন্ধুত্বের একপর্যায়ে একটি ম্যাসেঞ্জার আইডি থেকে পার্সেল গিফট করার প্রস্তাব দেয়। পরে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে এই পার্সেল বুক করার এয়ারলাইন্স বুকিং ডকুমেন্টও পাঠায়।

প্রতারকরা ওই ফেসবুক বন্ধুকে জানায় যে, এসব গিফট বক্সে বহুমূল্য সামগ্রী রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট এয়ারপোর্টের কাস্টমস গুদাম থেকে সেটা গ্রহণ করতে হবে। সিআইডি জানাচ্ছে কোনো কোনো প্রতারণার ঘটনায় কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের সামগ্রী পাঠানোর কথা বলা হয়।

এরপরে এই বিদেশী প্রতারকদের বাংলাদেশী সহযোগী একজন নারী নিজেকে কাস্টমস কমিশনার পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তিকে পার্সেলের শুল্ক বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যাংকে জমা দিতে বলে। গিফট গ্রহণ করা না হলে আইনি জটিলতারও ভয় দেখানো হয়।

সিআইডি জানাচ্ছে একটি ঘটনায় শুল্ক বাবদ ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়।

সিআইডি জানিয়েছে, তারা যে ব্যক্তির সূত্র ধরে এই প্রতারকদের ধরেছে, ওই ব্যক্তি মোট ৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা জমাও দিয়েছিলেন।

এভাবে এই প্রতারকরা গত দুই মাসের মধ্যে সারা দেশে প্রতারণা করে সব মিলিয়ে ৫-৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে সিআইডি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়েছে।

বিদেশী ব্যক্তিরা সবাই নাইজেরিয়ার নাগরিক। তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করলেও তাদের এখানে থাকার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা ছাড়াও অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকার অভিযোগে মামলা হচ্ছে।

সিআইডি পরামর্শ দিয়ে বলেছে, সামাজিক মাধ্যমে অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে বন্ধুত্বের আহবান এলে সেটা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়া টেলিফোনে বা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যদি উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দেয়, তাহলে পুলিশকে জানানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি