খেলাধুলা | তারিখঃ জানুয়ারি ২০, ২০২০ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 803 বার
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের মাস্ট উইন ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে গুড়িয়ে সেমিফাইনালে ওঠে গেল স্বাগতিক বাংলাদেশ। গতকাল বিকেলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ‘এ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ৩-০ গোলে সহজেই হারায় লাঙ্কানদের। বিজয়ী দলের হয়ে ফরোয়ার্ড মতিন মিয়া দু’টি এবং মোহাম্মদ ইব্রাহিম একটি গোল করেন। দুই ম্যাচে ৩ পয়েন্ট পাওয়া বাংলাদেশ ‘এ’গ্রুপের রানার্সআপ হলেও সমান ম্যাচে পয়েন্টশূন্য শ্রীলঙ্কা সবার আগেই বিদায় নিল টুর্নামেন্ট থেকে।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ডু অর ডাই ম্যাচ। আসরের সেমিফাইনালে খেলতে হলে গ্রæপের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে লঙ্কানদের বিপক্ষে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। যদি ম্যাচ ড্র হয় তবে বাধা পেরুতে হবে টাইব্রেকারে জিতে। এর আগে দু’দলই নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ২-০ হারায় গ্রæপের শেষ ম্যাচটি হয়ে ওঠে বাঁচা-মরার লড়াই। ম্যাচ ড্র হলে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের পয়েন্ট, গোল ব্যবধান এবং হেড টু হেড সমান হবে। ফলে শেষ চারের দল বেছে নিতে সরাসরি টাইব্রেকারের আশ্রয় নেবে আয়োজকরা। এমন সমীকরণকে পেছনে ফেলে যোগ্যতার দল হিসেবে নির্ধারিত সময়েই ম্যাচ জিতে শেষ চারে জায়গা পেল লাল-সবুজরা। তবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রায় ৫ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে দারুণ ফুটবল উপহার দিয়ে সহজ জয় পেলেও ম্যাচের অন্তিম সময়ে দশজনের দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। এসময় দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের শিকার হয়ে লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়েন স্বাগতিক অধিনায়ক তপু বর্মন।
কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পশ্চিম গ্যালারির পুরোটাই ছিল দর্শকে ঠাসা। সমর্থকরা ম্যাচের পুরোটা সময় ঢাক-ঢোল বাজিয়ে বাদ্য যন্ত্রের তালে তালে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে গ্যালারি মাতিয়ে রাখেন। এদিন সকালে বাংলাদেশ ফুটবলপ্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ ছিল- অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার চোট সারেনি। ফলে তিনি থাকছেন না শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাস্ট উইন ম্যাচে। শুধু জামালই নন, অসুস্থতার কারণে লঙ্কানদের বিপক্ষে মাঠে ছিলেন না লাল-সবুজ রক্ষনদূর্গের অতন্দ্র প্রহরী ইয়াসিন খানও। গুরুত্বপূর্ণ দুই ফুটবলা ছাড়া মাঠে নামলেও যোগ্যতা প্রমাণ করেই জিতেছে বাংলাদেশ।
বাঁচা-মরার লড়াই বলে মতিন মিয়া, মাহবুবুর রহমান সুফিলরা নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন মাঠে। তারা জামাল, ইয়াসিনদের অভাব বুঝতেই দেননি। তবে জামাল ভূঁইয়ার ইনজুরিতে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় চট্টগ্রাম আবাহনীর তরুণ মিডফিল্ডার মানিক হোসেন মোল্লার। মানিকগঞ্জের সন্তান এই মিডফিল্ডার অভিষেক ম্যাচে মাঝমাঠে ভালোই খেলেছেন। জাতীয় দলের জার্সিতে মানিকের প্রথম ম্যাচ এবং তপু বর্মনের প্রথমবার অধিনায়কের আর্মব্যান্ড হাতে। লঙ্কানদের বিপক্ষে অনেকটা নতুন কম্বিনেশন নিয়েই মাঠে নামে লাল-সবুজরা।
৪-৩-৩ পদ্ধতিতে খেলতে নেমে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাতœক ফুটবল উপহার দেয় বাংলাদেশ। মতিন মিয়া, সুফিল এবং ইব্রাহিমদের ধারাবাহিক আক্রমণের মুখে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কান ডিফেন্ডারা। তিনজনের মধ্যে মতিন খেলেছেন দু’প্রান্তেই। ক্ষিপ্র গতিতে বারবার লঙ্কান ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলেছেন তিনি। ফলে পেয়েছেন জোড়া গোল। তার করা দু’টি গোলই ছিল অসাধারণ। ম্যাচের ১৭ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে রিয়াদুল হাসানের উড়ন্ত ক্রস বাঁ পায়ে নামান মতিন। গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা এক লঙ্কান খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়ে ডান পায়ের শটে গোল করে দলকে উল্লাসে মাতান এই ফরোয়ার্ড (১-০)।
এগিয়ে থেকে বিরতিতে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধের বাংলাদেশের আধিপত্য ছিল স্পষ্ট। ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকেন মতিন, সাদ উদ্দিনরা। পাল্টা আক্রমণে শ্রীলঙ্কার ফরোয়ার্ডরাও মাঝে মধ্যে ভীতি ছড়ায় বাংলাদেশ রক্ষণভাগে। তবে তপু, বিশ^নাথরা এদিন ফিলিস্তিন ম্যাচের মতো ভুল করেননি। প্রতিপক্ষের সবগুলো আক্রমণই দক্ষতার সঙ্গে ফিরিয়ে দেন তারা। বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় গোলটি পায় ম্যাচের ৬৪ মিনিটে। এবারো নায়ক সেই মতিন মিয়া। এসময় লঙ্কান ডিফেন্ডার জুদে সুপানের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে একক প্রচেষ্টায় দ্রæতগতিতে এগিয়ে যান মতিন। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে কাটিয়ে ঠান্ডা মাথায় প্লেসিং শটে গোল করে ব্যবধান বাড়ান (২-০)।
মতিনের মতো দুর্দান্ত খেলা ইব্রাহিম গোল করেন ম্যাচের ৮৩ মিনিটে। বদলি ফরোয়ার্ড রাব্বি হোসেনের মাইনাসে শুধু পা লাগিয়ে দেন বসুন্ধরা কিংসের এই ফরোয়ার্ড (৩-০)। তবে ম্যাচের অন্তিম সময়ে প্রতিপক্ষের এক ফরোয়ার্ডকে অবৈধভাবে বাধা দেয়ায় দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশ অধিনায়ক তপু বর্মনকে। তবে দশজনের দলে পরিণত হলেও কোন সুবিধা আদায় করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ‘এ’ গ্রæপ রানার্সআপ হওয়ায় সেমিতে ‘বি’ গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন বুরুন্ডির মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ। আগামী ২৩ জানুয়ারি দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে দু’দল।
Leave a Reply