গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন কড়া পুলিশি পাহারায় ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। রোববার রাত ৯ টার কিছু পর নিজের কোয়ার্টার থেকে গাড়িতে করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন তিনি।

অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠিত তদন্ত কমিটি উপাচার্যকে প্রত্যাহার করার সুপারিশ করে। এমন পরিস্থিতিতে আজ রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়লেন তিনি।

এর আগে বিকেলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনকে অপসারণের সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। এরপরই উপাচার্যের ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে ক্যাম্পাসে গুঞ্জন শুরু হয়। উপাচার্যের ক্যাম্পাস ত্যাগের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। রাত ৯টার কিছু পর উপাচার্য ক্যাম্পাস ত্যাগ করলে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন।

গোপালগঞ্জ থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানান, পুলিশ পাহারায় উপাচার্য ক্যাস্পাস ত্যাগ করেছেন। রাত ৯ টার দিকে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অনেকটা নির্বিঘ্নেই তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রিয়তা দে বলেন, ভিসি ক্যাম্পাস ত্যাগ করার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দোল্লাস শুরু হয়। আমরা ভিসির পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। তার পতনের পর আনন্দ মিছিল করে ঘরে ফিরবো।

১১ দিন ধরে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। এর প্রেক্ষিতেই শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নির্দেশে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল ইউজিসি। ২৫ সেপ্টেম্বর কমিটির সদস্যরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিনে যান। সেখানে দু’দিন সরেজমিনে কাজ করে তদন্ত কমিটি। এরপর রোববার এই প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।

তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, তদন্তকালে তারা উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের প্রশাসনিক ও একাডেমিক নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন। দুই দফায় উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন শিক্ষক নিয়োগে একাধিক অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে আরও বেশি। প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে তদন্তকালে।

কমিটি প্রতিবেদনে বলেছে, নারী কেলেঙ্কারি, ভর্তি বাণিজ্য, উপাচার্যের বাসভবনের পাশে বিউটি পার্লার দিয়ে ব্যবসা করার মতো খবরে বিগত কয়েক বছর গণমাধ্যমে বারবার নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়েছেন এই উপাচার্য। গত বছর এপ্রিল মাসে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝিলিক নামে এক নারী কর্মচারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের তথ্য ফাঁস হয়। এতে নাসিরউদ্দিনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।