জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ আগস্ট ১০, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 426 বার
রাজধানীর ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি’র একটি “উলফ প্যাক” (Wolf Pack) এর ৫ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোহাম্মদ শিবলী শাহাজাদ ওরফে সাদী, শাহ এম আসাদুল্লাহ মর্তুজা কবীর ওরফে আবাবিল, মাসরিক আহমেদ, মোঃ আশরাফুল আল আমীন ওরফে তারেক ও এস এম তাসনিম রিফাত। এঁদের মধ্যে শিবলী শাহাজাদ ওরফে সাদী ও মর্তুজা কবীর বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
৮ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার দুপুর ১.৪৫ টায় ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তাদের নিকট হতে নিকট হতে তুলা দিয়ে পেচানো অবস্থায় ১০ (দশ) টি ডেটোনেটর এবং ৪ টি sun ব্যান্ডের গ্যাসের বোতল ও ৫টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
সিটিটিসি সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা নব্য জেএমবি’র একটি “উলফ প্যাকের” সদস্য। তারা দেশের ও বিদেশের কিছু সন্ত্রাসী সংগঠনের অনলাইন প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পুলিশকে টার্গেট করে হামলা পরিচালনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে শলা-পরামর্শ করার জন্য উল্লেখিত স্থানে একত্রিত হয়েছিল। তারা প্রত্যেকেই এনক্রিপটেড এ্যাপ সিক্রেট চ্যাটের মাধ্যমে পারস্পারিক যোগাযোগ করতেন।
গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের পরবর্তী মিশন সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত ও নিরাপত্তার স্বার্থে ‘উলফ প্যাক’-এর হামলা পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তাদের কাছ থেকে এমন কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে সম্প্রতি খামারবাড়ি ও পল্টন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া আইইডির মিল রয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’
তিনি বলেন, ‘এদের মধ্যে শিবলী শাহাজাদ (আত্মঘাতী) হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এ লক্ষ্যে সে আইইডি (হাতে তৈরি বোমা) তৈরির কিছু সরঞ্জাম জোগাড় করেছিল। সম্প্রতি (২৩ জুলাই) খামারবাড়ি ও পল্টন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া আইইডিতে গ্যাসের এক ধরনের ক্যান ব্যবহৃত হয়েছিল। এ ধরনের চারটি কনটেইনার শিবলী শাহাজাদ সংগ্রহ করেছিল। ওই ঘটনার সঙ্গেও এই পাঁচজনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।’
সিটিটিসি সূত্র জানায়, অনলাইনের বিভিন্ন সাইটে ঢুকে সেলফ মটিভেটেড হয়ে পরবর্তী সময়ে এই লোন উলফ সদস্যরা বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে জোটবদ্ধ হয়, যাদের কোনো নির্দিষ্ট সংগঠন বা নেতা নেই। এই কৌশলে অনেক আগে থেকেই জঙ্গিরা বিভিন্ন দেশে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। মনিরুল বলেন, ‘সাধারণত সেনাবাহিনীতে এই কৌশলের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।’
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শিবলী একটি ইস্তেহাদি হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আবাবিল ছিলেন তাঁদের আধ্যাত্মিক নেতা। বিশেষ পরিকল্পনা করে তাঁরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজ করতেন। এই হামলা চালাতে যে অর্থ লাগত ‘ডার্ক ওয়েব’ থেকে তা সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন। পুলিশের কাছে অর্থ সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য-প্রমাণও রয়েছে। শিবলী ২০১৪ সাল থেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ। কলাবাগান এলাকার আলামিন মসজিদে তিনি এর আগে অন্য জঙ্গিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। মর্তুজার সঙ্গে আড়াই মাস আগে বারিধারা এলাকায় তাঁর পরিচয় হয়। মাশরিক ও মর্তুজা দীর্ঘদিনের বন্ধু।
সিটিটিসি সূত্র আরো জানায়, গ্রেপ্তারদের মধ্যে মাশরিক আহমেদের দায়িত্ব ছিল সীমান্তপথে অস্ত্র সংগ্রহ করা। তিনি যশোরের বাসিন্দা। এ ছাড়া তারেক ও তাসনিম রিফাত মূলত সদস্য সংগ্রহের কাজ করতেন। এই পাঁচজনের সঙ্গে আরো কিছু নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতার করতে পারলে পুরো গ্রুপটি সম্পর্কে জানা যাবে।
আসামীদের বিরুদ্ধে রাজধানীর ভাটারা থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি রুজু করা হয়েছে।
Leave a Reply