আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গুরুতর অসুস্থ ওবায়দুল কাদেরকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল ৪টা ১২ মিনিটের দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি যাত্রা শুরু করে।
দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে তাকে বহনকারী এ্যাম্বুলেন্সসহ গাড়ি বহর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে রওনা হয় হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের উদ্দেশে। মাত্র দশ মিনিট সময়ের ব্যবধানেই তিনটা ৪০ মিনিটে ভিভিআইপি গেইট দিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশ করে ওবায়দুল কাদেরকে বহনকারী গাড়ি বহর।

এর আগে ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ভিভিআইপি গেইট দিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে নেওয়া হবে। তারপর রবিবার থেকে অপেক্ষায় থাকা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজোবেথ হাসপাতালে’।

উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দরে ডা. শেঠি পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান বিএসএমএমইউর প্রিভেনটিভ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। দুপুর দেড়টায় ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে হাসপাতালে পৌঁছান দেবী শেঠি। অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুর নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করার জন্য এর আগেই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে থাকা তার সকল তল্পিতল্পা গুছানো হয়। অর্থাৎ সিঙ্গাপুর নেওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল।

বেলা আড়াইটার দিকে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানান বিএসএমএমইউর উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া। বিএসএমএমইউর মিলটন হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ভারতের নামকরা হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি ওবায়দুল কাদেরকে দেখেছেন। সর্বশেষ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার পর তিনি মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন। দেবী শেঠি বলেছেন, আপনারা যে চিকিৎসা দিয়েছেন, চমৎকার চিকিৎসা হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকা হলেও একই চিকিৎসা হতো। এই রোগে এর বেশি কিছু করা সম্ভব না। ওনার অবস্থা কালকের চেয়ে মোটামুটি ভালো। তবে তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন। কালকের চেয়ে অবস্থা ভালো হওয়ার কারণে তাঁকে আজ শিফট করা যেতে পারে। কারণ, এর চেয়ে অবস্থা খারাপ হলে তখন আর শিফট করা যাবে না।’

কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, তাঁর এখনো ঝুঁকি আছে। তবে এ অবস্থায় চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—তাঁকে শিফট করা যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে সৈয়দ আলী আহসান (কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান) বলেন, আজ সকাল নয়টার পর থেকে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। প্রেশার ১১০ থেকে ৭০ হচ্ছে। মাঝেমধ্যে ১২০-১৩০ হচ্ছে। ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্সের যে বিষয়টি ছিল, সেটাও এখন নরমাল। তাঁর হাই ব্লাড সুগার ছিল, সেটাও নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক জটিলতার বিষয়ে ও তিনি ঝুঁকিমুক্ত কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, তাঁর ডায়াবেটিক অনিয়মিত পরীক্ষা করা হতো। আগেও হার্ট অ্যাটাক করেছিল। এরপর ঠিকভাবে শরীর চেকআপ করা হয়নি। তাঁর রক্তে ইনফেকশনের ব্যাপার আছে। সেটাও বেড়ে গেছে। তাঁকে শিফট করার এখনই ভালো সময়।

গতকাল রোববার ভোরে হঠাৎ শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের। এরপর তাঁকে বিএসএমএমইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। এনজিওগ্রাম করার পর তাঁর হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে।