ঢাকা থেকে ১৪২ কি.মি এবং টাঙ্গাইল থেকে ৪৭ কিলোমিটার দূরে মধুপুর বনাঞ্চল। জনান্তিকে জানা গেছে, মধু থেকেই নাম হয়েছে মধুপুর। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন মধুপুর। উপভোগ করতে পারেন সেখানকার অনুপম নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য।
যা দেখতে পাবেনঃ পাহাড়, নদী, বন ও বনবাসি গারো-কোচ হাজংসহ নানা নামের আদিবাসি অধ্যুষিত মধুপুরের প্রধান আকর্ষণ শাল বন। এখানে আছে আজুলি, গাধিয়াল, কাইকা, পলাশ, হরিতকি, বহেড়া, আমলকি, সোনালু ও জয়নাসহ হাজারো প্রজাতির উদ্ভিদ ও গুল্ম লতা। আছে বিরল প্রজাতির হনুমান, বানর, হরিন, বন মোরগ, বাগডাস, অজগর এবং নানা প্রজাতির পাখি। এ জঙ্গলের লহুরিয়া চিড়িয়াখানায় আছে শতাধিক হরিণ। ১৯৬২ সালে বনের এই অংশ ন্যাশনাল পার্কের মর্যাদা পায়। চিড়িয়াখানার পাশের টাওয়ারে উঠে নির্জন ও নির্মল প্রকৃতিকে প্রাণ ভরে উপভোগ করতে পারবেন, দেখতে পাবেন বিভিন্ন বন্যপ্রাণী, পাখি।
কিভাবে যাবেনঃ ঢাকার মহাখালি থেকে সারাদিনই চলে বিনিময় পরিবহনের বাস। সময় লাগে ৪/৫ ঘন্টা। ভাড়া ২৫০ টাকা। শুভেচ্ছা পরিবহনের আরামদায়ক গাড়ি মহাখালি থেকে বিকাল ৫টায় ছেড়ে আসে। মোবাইল নাম্বার ০১৭২৯৭০২১৪০।
উঠবেন কোথায় এবং খাবেন কীঃ মধুপুর উপজেলা সদরে আদিত্য, সৈকত এবং ড্রিমটাচ নামের তিনটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। হোটেল আদিত্যের এসি রুম ভাড়া প্রতিদিন এক হাজার টাকা। সিঙ্গেল ১৫০, ডাবল ২৫০ টাকা। মোবাইল-০১৯২৯১০৬৩৫০। সৈকতে সিঙ্গেল ১০০ টাকা, ডাবল ২০০ টাকা। মোবাইল-০১৭২০৯৫০২৯৯। ড্রিম টাচে সিঙ্গেল ১০০ টাকা, ডাবল ১৫০ টাকা। মোবাইল-০১৭১৭১৮৭৯৯। এখানেই আছে মৌচাক এবং সুনীল হোটেলে রুচিসম্মত খাবার হোটেল। অগ্রীম বুকিং দিয়ে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ফোন ০৯২১-৬২৮৮৪, ধনবাড়ি নবাব প্যালেস বাংলো (এসি/ ননএসি) মোবাইল-০১৭৬৮৭৩৭২১৪, কাকরাইদ বিএডিসির বাংলো (এসি/ ননএসি) মোবাইল- ০১৭১৩০২৭৮৮৯ নাম্বারে যোগাযোগ করে আসতে পারেন। জঙ্গলে রাত যাপন করতে হলে টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন অফিসের ০৯২১-৬৩৫২৪ নাম্বারে বুকিং দিতে হবে। ভিআইপি দোখলা বাংলো নভেম্বর হতে মার্চ পিক সিজনে তিন হাজার ৩শ। অপসিজনে ১ হাজার ৬৫০ টাকা। চুনিয়া কটেজ পিক সিজনে ২ হাজার ২শ। অফসিজনে ১ হাজার ১শ টাকা। জলই, মহুয়া, জুই ও চামেলি কটেজ পিক সিজনে ৬শ, অফসিজনে ৩শ টাকা।
কোথায় কি দেখবেনঃ তারপর মধুপুর সদর থেকে নিজস্ব গাড়িতে কিংবা সিএনজি, ইজিবাইক বা রেন্ট এ কার ভাড়া করে ভ্রমণে যেতে পারেন। মধুপুর থেকে গহীন জঙ্গলে ইট বিছানো সর্পিল পথ ধরে যেতে হবে রসুলপুর। সেখান থেকে পাঁচ কি.মি দূরেই দোখলা পিকনিক স্পট। জলে ঢাকা বাইদের (দুই পাহাড়ের মাঝখানের নিচু জলাভূমি) এপারে দোখলা রেস্ট হাউজ। ওপারে চুনিয়া কটেজ। এই দোখলা রেস্ট হাউজে বসেই বাংলাদেশের সংবিধান তৈরি করা হয়েছিল। এই রেস্ট হাউজের পূর্বপাশ জুড়ে তেঁতুল আর আমলকির বন। দখিনের সড়ক গেছে রাবার বাগান অবধি। পিকনিক স্পটের খোলা চত্বরে সাইডভিউ টাওয়ার। একটু এগুলেই গারো পল্লী। এই পল্লীর ঘরবাড়ি একেবারে ঝকঝকে তকতকে। আঙ্গিনায় হরেক প্রজাতির ফুলফলের বাগান। কাছেই পীরগাছা ক্রাইস্ট মিশন ও গীর্জা। গারো কালচারাল সেন্টার ও আদিবাসি পোশাক বিক্রয় কেন্দ্র। পাশেই মিশন স্কুল। জলজ উদ্ভিদে ভরা সুদৃশ্য বাইদ, আকাশ ছোঁয়া গজারির সারি, সুমিষ্ট আনারস ও কাঁঠাল বাগান, সবুজ অরণ্যানির আড়ালে ছিমছাম গারো বাড়ি। মিশন থেকে আরো ৫ কি.মি পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা পেরুলে শোলাকুড়ি গ্রামের সুলতানী আমলের সামন্ত রাজা ভগবত্ দত্তের বিশাল দীঘি। দেড় হাজার একরের বিশাল দীঘির পাড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বিদের প্রাচীন মন্দির। বৈশাখের পূর্ণিমায় সেখানে শিব পূজা ও রাসমেলা বসে।
এখানে আছে সাত হাজার একরের সরকারি রাবার বাগান। খুব ভোর থেকেই শ্রমিকরা গাছের বাকল কেটে সংগ্রহ করে কাঁচা রাবার। সংগৃহিত কাঁচা রাবার কারখানায় জমিয়ে ধুঁম ঘরে নিয়ে প্রসেস করা হয়। সন্তোষপুর রাবার বাগানে যেতে পড়বে বিএডিসির সুদৃশ্য কাকরাইদ ক্যাম্পাস। একশ’ গজ সামনেই জয়তেঁতুল গ্রামের পাহাড়ি ঝরনা। কয়েক কি.মি সামনেই ইতিহাস প্রসিদ্ধ সাগরদীঘি। শতাব্দী প্রাচীন হিজলতলা মন্দির। কাকরাইদ থেকে ময়মনসিংহ সড়ক ধরে এগুলে বন গবেষণা কেন্দ্রের ভেষজ উদ্যান, বৈষ্ণবদের আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী সনাতন মন্দির, জলছত্র ক্রাইস্ট মিশন, বেলজিয়ামের অনুদানে নির্মিত বৃহত্তম কুষ্ঠ ব্যাধি হাসপাতাল, কারিতাস সিল্ক ফ্যাক্টরি ও শোরুম। আরো সামনে রসুলপুর বিমান বাহিনীর ফায়ারিং রেঞ্জের সুদৃশ্য চত্বর ও হযরত জয়েনশাহী পীরের মাজার। মধুপুরে এলে ধনবাড়ি নওয়াব প্রাসাদ দেখতে ভুলবেন না। নবাবদের ব্যবহূত পোশাক, তৈজশপত্র, কুশন, খাটপালঙ্ক ও যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে যাদুঘর। আছে পারস্য স্থাপত্য রীতির চারশ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাদশাহী মসজিদ।
আপনজনদের জন্য কি নেবেনঃ এখানে সহস্রাধিক মৌচাষি বার্ষিক দেড় থেকে দুইশ টন মধু উত্পাদন করেন। মৌচাষ উন্নয়ন সংস্থার কাকরাইদ অফিসে খুচরা ও পাইকারি দরে মধু বিক্রি হয়। নিতে পারেন মধুপুরের বিশুদ্ধ মধু। ০১৭১২৫৬৩৫০১নং মোবাইলে কল দিয়ে মধু কেনার খুটিনাটি বিষয় জেনে নিতে পারেন। এছাড়াও মিশন শোরুম থেকে আদিবাসি পোশাক, জলছত্র কারিতাস সিল্কের শোরুম থেকে শাড়ি ও জামাকাপড় কিনতে পারেন। মধুপুরের সুস্বাদু আনারস কিনতে ভুলবেন না যেন।———– ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ।