একমাত্র ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনশন করেছেন নিহত ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর হতভাগ্য মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। এ সময় তিনি বিলাপ করতে থাকেন। একপর্যায়ে মাঠে স্রষ্টার কাছেও তিনি ছেলে হত্যার বিচার চাইছিলেন।

বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। এ সময় মাঠে বিলাপ করতে থাকেন দিয়াজের মা। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার পরও তার বিলাপ থামেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্মচারী সমিতির বার্ষিক খেলার মাঠে এসে ওই মা বিলাপ করতে থাকেন। খেলার মাঠেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। পরে অসুস্থ অবস্থায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

জাহেদা আমিন চৌধুরীর মেয়ে জুবাইদা সরওয়ার চৌধুরী বলেন, মা ম্যাগাজিনে আলমগীর টিপুর ছবি দেখে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি আনোয়ারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। কিন্তু আনোয়ার হোসেন মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন উত্তর ক্যাম্পাসে নিজ বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজের লাশ।

ঘটনার পর দিন প্রথম দফা ময়নাতদন্ত করা হয়। ২৩ নভেম্বর ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে দিয়াজের পরিবার এ ঘটনাটিকে ‘পরিকল্পিত হত্যা’ বলে দাবি করে আসছিল।

দিয়াজের লাশ উদ্ধারের চার দিন পর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন। এ সময় তিনি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।

পরে ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন এক সহকারী প্রক্টর, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং সংগঠনটির বর্তমান ও সাবেক ১০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।

দিয়াজের মায়ের আপত্তির ফলে আদালত সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। এর পর দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা।

তদন্তের স্বার্থে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে একটি টিম দিয়াজের বাসা পরিদর্শন করেন।

পরে ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই দেয়া দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দিয়াজের শরীরে হত্যার আলমত রয়েছে বলা হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর দিয়াজের মায়ের করা এজাহার হত্যা মামলা হিসেবে নিতে হাটহাজারী থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়।