রাজধানীর মিরপুর থানা এলাকা থেকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সর্বস্ব লুটে নেয়া ডাকাত চক্রের দলনেতাসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ’র ডিবি (উত্তর) বিভাগের একটি দল।

গ্রেফতারকৃতরা হলো-গৌতম রাজবংশী (৩২), মোঃ আব্দুস সালাম (২৪), সুব্রত কুমার ঘোষ ওরফে মোঃ শুভ (২৭), সুব্রত কুমার দত্ত (২৮), মোঃ মাসুদ রানা (২৫), ও মোঃ মহিন (২০)। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত হতে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ২টি চাপাতি ও ১টি চাকু উদ্ধার করা হয়।

১১ জানুয়ারি’১৮ সন্ধ্যা ৬.৪৫ টায় মিরপুর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিবি (উত্তর) বিভাগের গুলশান জোনাল টিম।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী মিরপুর, কল্যানপুর, টেকনিক্যাল, গাবতলী বাস স্ট্যান্ডসহ মহানগরীর বিভিন্ন জন কোলাহলপূর্ণ স্থানে প্রতিনিয়ত ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। জানা যায় ডাকাত/ছিনতাইকারীরা কখনও মোটর সাইকেল, কখনো প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাস যোগে পথচারী বা রাস্তায় চলাচলকারীদের কাছ থেকে মূল্যবান সামগ্রী-ভ্যানিটি ব্যাগ, গলার চেইন, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। বিষয়টি নিয়ে কাজ গুরু করে উক্ত চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ এবং তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে ডাকাতদল প্রতিদিনের ন্যায় ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সমবেত হলে মিরপুর থানা এলাকা হতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

ডিবি সূত্রে আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা মিরপুর ও তার আশপাশ এলাকায় সন্ধ্যা ও ভোর রাতে পথচারীদের গতিরোধ করে তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিত। ছিনতাইকালে তারা একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কখনও দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে, আবার কখনও অভিনব কলা কৌশল অবলম্বন করে ছিনতাই করত।

অভিনব ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের কৌশল সম্পর্কে জানা যায় ভূক্তভোগী লামিয়ার (ছদ্মনাম) কাছ থেকে। বেশ কিছুদিন আগে তিনি সন্ধ্যার পরে মিরপুর থানার সামনে রাস্তা দিয়ে রিক্সাযোগে যাওয়ার সময় তিনজন যুবক রিক্সার গতিরোধ করে। তারা জানায় আমরা একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ করছি। দুঃস্থ গরীব মেয়েদের আমরা দৈনিক হাজিরা হিসেবে ৩০০ টাকা দিচ্ছি। আপু আপনাদের বাসায় কাজের মেয়ে আছে না? তাহলে তার জন্য আপনি টাকা নিয়ে যান, প্লিজ। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে তিনি রিক্সা থেকে নামেন ও বিস্তারিত জানতে চান। এর মধ্যে দুইজন যুবক ঘটনাস্থলে এসে বলে আমরা ৬০০ টাকা নিয়ে আসলাম, ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাদের। এবার লামিয়াকে গতিরোধকারীরা বলল আপু তাহলে আপনিও তাড়াতাড়ি যান। এদিকে যারা টাকা নিয়ে এসেছে বলে দাবী করেছে, তারা আবার এক নতুন কৌশল অবলম্বন করল। বললো আপু আপনার গলায়, কানে, হাতে স্বর্ণের অলংকার আপনি এগুলো আপনার ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে তার পরে যান, তা না হলে ওরা আবার ভাববে আপনি অনেক বড়লোক তখন টাকা নাও দিতে পারে। এ কথা শুনে তিনি নিজের গলার, হাতের, কানের স্বর্ণালংকার খুলে ভ্যানিটি ব্যাগে রাখেন। মূহুর্তের মধ্যেই একজন এসে ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয় এবং বাকিরা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে পালিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।

ডিবি সূত্রে আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা মূলত সবাই উঠতি বয়সি এবং মাদকাসক্ত। এরা সারারাত বাহিরে ঘোরাফেরা করে এবং তাদরে পরিকল্পনা মাফিক সুবিধাজনক স্থানে ডাকাতি ও ছিনতাই করে থাকে এবং দিনের বেলায় নিজের বাসায় অথবা একজন আরেক জনের বাসায় ঘুমায়।সুত্র-ডিএমপি নিউজ