‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। মঙ্গলার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির সামনে দলের এই ইশতেহার উপস্থাপন করেন। ঘোষিত ইশতেহারে ২১টি অঙ্গীকারের কথা জানান শেখ হাসিনা, যার শুরুতেই রয়েছে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া এবং যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি। এক দশকে সরকার পরিচালনায় কোন ভুল হয়ে থাকলে তা ‘ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে’ দেখার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আবার নৌকাকে বিজয়ী করলে তিনি আরও ‘উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি’ এনে দেবেন, আর এটাই তার নির্বাচনী ওয়াদা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক এবং দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। এরপর ইশতেহার ঘোষণা করেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জ্যেষ্ঠ নেতা, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, প্রকৌশলী, বুদ্ধিজীবী, তরুণ সমাজের প্রতিনিধি, দেশি-বিদেশি সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে তথ্যচিত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের শাসনমালের উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরা হয়।

ইশতেহারে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান, গত দুই মেয়াদে সরকারের সাফল্য এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। ৫টি ধাপে কীভাবে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করে ২১০০ সালের মধ্যে নিরাপদ ব-দ্বীপ প্রতিষ্ঠা করা হবে সে বিষয়ে ডেল্টা প্লান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ইশতেহারে। এই পাঁচটি ধাপ হচ্ছে- ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন; ২০৩০ সালে উন্নয়ন জংশন এর মাধ্যমে এসডিজি অর্জন; ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হয়ে স্বপ্নের সোনার বাংলার বাস্তবায়ন; ২০৭১ সালে সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করে স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি উদযাপন; ২১০০ সালের মধ্যে নিরাপদ ব-দ্বীপ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ডেল্টা প্ল্যান।

পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত ৮০ পৃষ্ঠার এই ইশতেহারে ৭টি উপ-শিরোনামে প্রতিশ্রুতি, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। ৭টি উপ-শিরোনাম হচ্ছে- ‘আমাদের বিশেষ অঙ্গীকার; পটভূমি; সরকার পরিচালনায় দুই মেয়াদে (২০০৯-১৮) সাফল্য ও অর্জন এবং আগামী পাঁচ বছরের (২০১৯-২৩) লক্ষ্য ও পরিকল্পনা; এমডিজি অর্জন এবং এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন) বাস্তবায়ন কৌশল (২০১৬-৩০); ব-দ্বীপ বা ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০; জননেত্রী শেখ হাসিনার সম্মোহনী নেতৃত্বের বিশ্বজনীন স্বীকৃতি; দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান’।

ইশতেহারে ঘোষিত ২১টি অঙ্গীকার
‘আমার গ্রাম-আমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ; তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি : তরুণ যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ; নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশু কল্যাণ; পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা; সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল; মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন; গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা; দারিদ্র্য নির্মূল; সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি; সকলের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা; সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা; আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা-লক্ষ্য যান্ত্রিকীকরণ; দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন; জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা; ব্লু-ইকোনোমি-সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন; নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা; প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ; টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ; সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি।’

‘এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের মানুষ যারা আমার যুকব শ্রেণী আছে তারা চাকরি না পায় কাজ না পায়।’- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই হৃদয়স্পর্শী উক্তিটি রয়েছে অঙ্গীকারের শেষে।

ভুল থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ শেখ হাসিনার : নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করতে অনুষ্ঠানের মঞ্চে এসে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমেই স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ত্রিশ লাখ শহীদ, দুই লাখ নির্যাতিত নারী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তান, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে। স্মরণ করেন ভাষার মর্যদা রক্ষায় অকাতরে জীবন দেয়া ভাষা শহীদদের, আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীদের নির্মম হত্যাকা-ের শিকার সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজউদ্দিনসহ ২১ হাজার নেতাকর্মীকে। সমবেদনা ও শ্রদ্ধা জানান ২০১৪-১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসে নিতদের প্রতি এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নূর হোসেনসহ শহীদ অন্যদের প্রতি।

অনুষ্ঠানে ইশতেহারের সারসংক্ষেপ পড়ে শুনিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হয়। কাজ করতে গিয়ে আমার বা আমার সহকর্মীদেরও ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকতে পারে। নিজের ও দলের পক্ষ থেকে আমাদের যদি কোন ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে, সেগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য দেশবাসী আপনাদের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। ভোটারদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি কথা দিচ্ছি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরও সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করব। জাতির পিতার কাক্সিক্ষত- ক্ষুধা, দারিদ্র্য নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগ ‘টেকসই বিনিয়োগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ নিশ্চিত করতে কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কথা নয়, কাজে বিশ্বাস করে। ইশতেহার ঘোষণা শেষে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বাংলাদেশ। বাঙালি জাতির এই দুই মাহেন্দ্রক্ষণ সামনে রেখে, মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগই পারবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে, পারবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে। গৌরবের এই সময়কালে স্বাধীনতাবিরোধী কোন শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলে তা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে গ্লানিকর হবে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার প্রতীক নৌকা মার্কায় বিজয় অর্জন করবে, এ বিশ্বাস আমাদের আছে। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। নিজের ব্যক্তিগত কোন চাওয়া-পাওয়া নেই মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনকে হারিয়ে রাজনীতি করছি শুধু জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। এদেশের সাধারণ মানুষ যাতে ভালোভাবে বাঁচতে পারে, উন্নত জীবন পায়, তাদের জীবন সমৃদ্ধশালী হয়, ক্ষুধা দারিদ্র্য থেকে বঞ্চনা থেকে তারা মুক্তি পায়। তাদের জীবনটাকে উন্নত করা, এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র কামনা। নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আবার আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করুন। আপনারা নৌকায় ভোট দিন। আমরা আপনাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন করে দেব। এটা আমাদের জাতির কাছে ওয়াদা।

‘যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ; প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি- নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’- তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতার বিখ্যাত কয়েকটি পঙক্তি উদ্ধৃত করে ইশতেহার ঘোষণা সংক্রান্ত বক্তব্য শেখ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের বিশ্বাস, বিজয়ের মাসে বিজয় হবে বিজয়ের মহাবীর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বিজয় আমাদের হবেই, ভিক্টরি ইজ আওয়ারস। স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ বৃহত্তম, ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। প্রগতিশীল আন্দোলনে তারা নেতৃত্ব দিয়েছে। আওয়ামী লীগ দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্য এই নির্বাচন ইশতেহার উপস্থাপন করছে।

৩৩টি ক্ষেত্রের প্রতি গুরুত্বারোপ : ইশতেহারে দুই ধরনের কৌশলগত পরিকল্পনার আওতায় বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং লাখো শহীদের স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ৩৩টি ক্ষেত্রের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইশতেহারে একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়পরায়নতা এবং জনসেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার ঘোষণা রয়েছে। প্রামে আধুনিক সুবিধার উপস্থিতি, শিল্প উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন ও সুরক্ষা, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য খাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এবারের ইশতেহারের মূল বিষয় হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে তারুণ্য এবং গ্রামের উন্নয়ন। প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা নিশ্চিতকরণ, তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করার অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ। ইশতেহারে নারীর ক্ষমতা, লিঙ্গসমতা ও শিশুকল্যাণ নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে।

আগামী পাঁচ বছরে দলটি পদ্মা সেতু, ঢাকায় মেট্রোরেলসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন করতে চায়। ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু করাসহ দেশে আরও একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা, দারিদ্র্য নির্মূল, সবস্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার এবং ‘ফাইভ-জি’ চালু, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া রয়েছে দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, ব্লু-ইকোনমি এবং সমুদ্র উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায়ের উন্নয়ন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতকরণ, প্রতিরক্ষা: নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও অখ-তার সুরক্ষা, পররাষ্ট্র, এনজিও বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা এসেছে ইশতেহারে। এছাড়া, শেখ হাসিনার সম্মোহনী নেতৃত্বের বিশ্বজনীন স্বীকৃতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হয়েছে ইশতেহারে। সব শেষে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান উপ-শিরোনামে লাখ শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায়, দেশবাসীর সমর্থন কামনা করে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের পক্ষে, নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন শেখ হাসিনা।

ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু করা হবে। ইশতেহারে জানানো হয়, দেশের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোকে আধুনিকায়ন এবং একটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ৫ বছরে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন এবং ঢাকার চারপাশের ৪টি নদী-খালগুলোকে খননের মাধ্যমে নদী তীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হবে। উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার জন্য যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করা হবে জানিয়ে ইশতেহারে বলা হয়, রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আধুনিক বাস সার্ভিস চালু করা হবে। মহাসড়কের পাশে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আন্ডারপাস/ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। ইশতেহারে বলা হয়, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের নির্মাণ কাজ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর এবং বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত অংশ পরের বছর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ হবে। তৃতীয় পর্যায়ে পল্লবী থেকে উত্তরা পর্যন্ত চার দশমিক ৭ কিলোমিটার অংশ চালু হবে ২০২২ সালে। শেখ হাসিনা জানান, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জের কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ চার- লেন বিশিষ্ট প্রথম ঢাকা এলিভেটড এক্সপ্রেসওয়ে তিনটি পর্বে নির্মিত হচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া হয়ে চন্দ্রা পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ আরেকটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া, ইস্টন্ডয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নামে সাভারের হেমায়েতপুর হতে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে ঋণ সুবিধা :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে আবারও সরকার গঠন করলে দেশের নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে আলাদা ব্যাংকিং ও ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ইশতেহারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীর প্রতি সকল বৈষম্যমূলক আচরণ/প্রথা বিলোপ করা হবে। বাল্যবিবাহ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা হবে। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ‘জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ’ এবং রাষ্ট্র ও জনজীবনের সবস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর।’

কৃষি খাদ্য ও পুষ্টি : আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় এলে ছোট ও মাঝারি আকারের দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠা এবং মৎস্য চাষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনমতো ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতি সহায়তা বৃদ্ধি করা হবে। কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে, ‘ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষিপণ্যের সরাসরি বাজারজাত করা হবে। কৃষি গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে। ইশতেহারে আরও বলা হয়, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনের সফল ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি কৃষি উপকরণের ওপর ভর্তুকি অব্যাহত রাখা এবং কৃষি যন্ত্রপাতি সুলভ ও সহজলভ্য করা হবে। বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের অভূতপূর্ব সাফল্য বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ : ইশতেহারে বলা হয়, আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহের অধিকার সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। ব্যাকপহারে টিভি, রেডিও, পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের অনুমোদন, সাংবাদিকদের নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা, সর্বস্তরে এই ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে। সাংবাদিক প্রশিক্ষণ, সাংবাদিকদের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্প গ্রহণ, জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রস্তাবিত ২১ তলা ভবন নির্মাণে সহায়তা প্রদান, সাংবাদিকদের কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আর্থিক ও চিকিৎসা সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ও উল্লেখ করা হয় ইশতেহারে।