জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ আগস্ট ৪, ২০১৮ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 540 বার
শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন যখন সর্বস্তরে জনসমর্থন পাচ্ছিল ঠিক তখনই আন্দোলনকে ভিন্ন খানে প্রবাহিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে একটি কুচক্রীমহল। আজ সকাল থেকেই অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর টেলিফোন কথপোকথন। এর মধ্যেইফেসবুকের সকল গ্রুপ, মেসেঞ্জার এবং পার্সোনাল ওয়ালে ভাইরাল হয়ে গেছে ৮টির বেশি ভিডিও। সেখানে বারবার দাবি করা হয়েছে ৪ জন মেয়েকে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুইজন মেয়েকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং রেপ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ধানমন্ডিতে হওয়া সংঘর্ষে প্রাথমিকভাবে দুইজন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে কিছু ভিডিওতে। অন্য ভিডিওগুলোতে জানানো হয়েছে, নিহত হয়েছেন চারজন। পুলিশ বর্তমানে এই ভিডিওতে কথাবলা মানুষ এবং নিহত ও ধর্ষণের শিকার মোট ৮ জনের পরিচয় খুঁজছে।
এই সকল গুজবের মধ্যে নতুন এক মাত্র যুক্ত করেছিলো অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদের একটি লাইভ ভিডিও। যেখানে তিনি দাবি করেন- ‘একজনের চোখ তুলে নেয়া হয়েছে এবং দুইজনকে মেরে ফেলা হয়েছে।’ এ সময় তিনি কান্না ভেজ কণ্ঠে সবাইকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান। তার ভিডিওটি দারুণ সাড়া ফেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। প্রচুর শেয়ার এবং রি পোস্ট হয় এই ভিডিও। তিনি আরো দাবি করেন, ‘তাদের ওপর ছাত্রলীগের ছেলেরা হামলা চালাচ্ছে’। তিনি আরো বলেন, ‘সরকার দায়িত্ব না নিলে জনগণ দায়িত্ব নেবে, আমরা ৭১ দেখেছি, আমরা ৫২ দেখেছি, আমাদের দরকার নেই কাউকে।’
পরবর্তীতে এই ভিডিও প্রসঙ্গে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে পুলিশকে তিনি জানান, একটি ফোন কল পেয়ে এই লাইভ ভিডিওটি করেন তিনি। কিন্তু নিজ দায়িত্ববোধ ও সুনাগরিকের স্থান থেকে পেনিক সৃষ্টি করেছেন নওশাবা। তার ভিডিও শেয়ারের পরবর্তীতে যে সংঘর্ষ হয়েছে এবং তার ফলে যারা আহত হয়েছেন এবং সম্পদের ক্ষতি হয়েছে এর দায়দায়িত্ব কে নেবে জানতে চাওয়া হলে তিনি এর উত্তর পাশ কাটিয়ে যান।
নওশাব ছাড়াও আরো তিনটি মেয়ে ফেসবুক লাইভে এসে দাবি করে মেয়েদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। চিৎকার, কান্নাকাটি ও হুংকারের মাধ্যমে তারা এই বিষয়ে কথা বললেও সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য তারা প্রকাশ করেনি। এই ভিডিওগুলো প্রসঙ্গে পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, আমাদের কাছে কোন ধর্ষণের বা নিহতে খবর আসেনি। এখন পর্যন্ত আন্দোলনে যাওয়া কোন শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে বলেও আমাদের কাছে কোন অভিযোগ করা হয়নি। সুতরাং এই ভিডিও করা মানুষদের এবং ভিডিওতে বক্তব্য দেয়া মানুষদের খুঁজছি আমার। হয়ত তারা আমাদের এই হত্যা ও ধর্ষণ রহস্যের সমাধান করতে পারবেন।
এই তিন মেয়ে ছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে এক ছেলে কাঁদতে কাঁদতে জানায়, তার সামনে মেয়েদের তুলে নিয়ে গেছে। ছেলেদের অবিচারে মারধর করা হচ্ছে বলেও সে দাবি করে। কিন্তু এ ঘটনার কোন সত্যতাও মেলেনি।
‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান তুলে অপর এক ভিডিওতে দাবি করা হয় চারজন ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে, তাদের রক্তের জবাব দিতে হবে। কিন্তু এই ভিডিওর কোন সত্যতা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
পুলিশের মিডিয়া উইং থেকে সকলের উদ্দেশ্য অনুরোধ করা হয়, না জেনে এবং সত্যতা নিশ্চিত না করে এ ধরণের ভিডিও শেয়ার না করার জন্য। অকারণ পেনিক সৃষ্টির জন্য পরবর্তীতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়।
এদিকে গুজব এর ব্যাপারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন,আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডি পার্টি অফিসে কাউকে আটক রাখা হয়নি। তারা বলেন, আমাদের কে বলা হয়েছিল চারজন মেয়েকে আটকে রাখা হয়েছে। এবং ছেলেদের ভিতরে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। কিন্তু আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে সেখানে কেউ নেই। মারধরের বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব।
শনিবার সন্ধ্যায় ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে তারা এ দাবি করেন।
তারা বলেন, আমরা প্রেস কনফারেন্সে বলে এসেছি। এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিপক্ষে না, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরও বিপক্ষে না। আমাদের ৯টা দাবি সেটা মেনে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার প্রক্রিয়া চলছে। তবে কালকের মধ্যে আমাদের দাবি মানতে হবে। আর আমাদের শিক্ষার্থীদের যেন মারধর না করা হয়। তবে আজকের জন্য কার্যক্রম বন্ধ বলে জানান তারা।
Leave a Reply